ভুল নম্বরে পাঠানো একটি টেক্সট মেসেজ থেকে শুরু হয়েছিল ওয়ান্দা ডেঞ্চ ও জামাল হিন্টনের পরিচয়। ১০ বছর পরে সেই আকস্মিক ঘটনাটি রূপ নিয়েছে এক অনন্য বন্ধুত্বে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন এই গল্প থ্যাংকস গিভিং উপলক্ষে সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ী গল্পগুলোর একটি।
সিএনএন জানিয়েছে, ২০১৬ সালে ওয়ান্দা তাঁর ছয় নাতি-নাতনির একজনকে থ্যাংকস গিভিং ডিনারে আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি টেক্সট পাঠান। কিন্তু নম্বর পাল্টে যাওয়ায় বার্তাটি গিয়ে পৌঁছায় তখনকার ১৭ বছর বয়সী হাইস্কুলের শিক্ষার্থী জামাল হিন্টনের কাছে। সন্দেহ হওয়ায় জামাল একটি ছবি চান ওয়ান্দার কাছে। ওয়ান্দা যখন তাঁর একটি সেলফি পাঠান, তখন জামাল বুঝতে পারেন—ওই নারী ভুল করে তাঁকে মেসেজ পাঠিয়েছেন।
এবার জামাল তাঁর নিজের একটি সেলফি পাঠিয়ে রসিকতা করে জানতে চান, ‘আমি কি তাহলে থ্যাংকস গিভিং প্লেটটা পাব?’
ভুল ঠিকানায় বার্তা পাঠানোর বিষয়টি ততক্ষণে বুঝে ফেলেন ওয়ান্দাও। তবে ফিরতি বার্তায় তিনি লেখেন, ‘দাদিরা তো সব সময় খাবারের জন্য দরজা খুলেই রাখেন।’
সেই থেকে শুরু হয় অচেনা দুই দাদি-নাতির গল্প, যে গল্পের কথা দ্রুতই ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে যায়। আমেরিকানেরা এটা জেনে মুগ্ধ হন যে, জামাল সত্যিই সেই বছর ওয়ান্দার পরিবারের সঙ্গে থ্যাংকস গিভিং কাটিয়েছিলেন।
২০১৬ সালের পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার মাঝে এই গল্প হয়ে ওঠে এক মানবিক আলো। সেবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচন জয়, ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের সূত্রপাত—সবকিছুর ভিড়ে ওয়ান্দা-জামালের বন্ধুত্ব মানুষের মনে এনে দেয় এক শান্তির বার্তা।
এর পর থেকে প্রতিবছরই তাঁরা একসঙ্গে থ্যাংকস গিভিং পালন করছেন। শুধু ২০২৩ সালে স্তন ক্যানসারের চিকিৎসার কারণে শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে পারেননি ওয়ান্দা। তবে জামাল সেবার ভিডিওকলে তাঁকে সঙ্গ দিয়েছিলেন।
ওয়ান্দার প্রয়াত স্বামী লনি ডেঞ্চ ২০২০ সালে কোভিড-১৯ জটিলতায় মারা যান। ওয়ান্দাকে তিনি একবার বলেছিলেন, ‘তোমাদের দুজনের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আমেরিকার সুস্থতার জন্য তোমাদের প্রয়োজন।’ সেই কথা মনে পড়লেই আবেগে ভেসে যান ওয়ান্দা।
লনি ডেঞ্চের মৃত্যুর পর প্রথম থ্যাংকস গিভিং ছিল অনেক বেদনাময়। পরিবার-পরিজন আর জামালের উপস্থিতিতে টেবিলে লনির স্মৃতির প্রতীক হিসেবে একটি জ্বলন্ত মোমবাতি রাখা হয়েছিল। এরপর বছর বছর তাঁদের দাদি-নাতির সম্পর্ক আরও গভীর হয়।
বর্তমানে ২৬ বছর বয়সী জামাল হিন্টন ব্যবসায়ী ও সেলস ডিরেক্টর হওয়ার পাশাপাশি যুব বাস্কেটবল কোচ হিসেবে কাজ করেন। এই বছরের থ্যাংকস গিভিং আয়োজন হচ্ছে জামালের খালার বাড়িতে। এবার ওয়ান্দাই যাবেন সেখানে। তিনি প্রথমবারের মতো জামালের পরিবারকে দেখার জন্য উদ্গ্রীব।
তবে দুজনের এই গল্প নিয়ে আমেরিকায় এত বেশি চর্চা হয়েছে যে, বর্তমানে তাঁরা মিডিয়া তারকা বনে গেছেন। দেশজুড়েই তাঁরা পরিচিত। শুধু তাই নয়, এই বছর তাঁদের থ্যাংকস গিভিং পার্টি স্পন্সর করছে ‘গ্রিন জায়ান্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
ওয়ান্দা বলেন, ‘এই গল্প সবাই ভুলে গেলেও আমরা প্রতিবছরই একসঙ্গে থ্যাংকস গিভিং উদ্যাপন করব। কারণ, আমাদের বন্ধুত্ব সত্যিকারের, কোনো রকম সাজানো নয়।’