যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ১ হাজার ৪০০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এর আগে মার্কিন ফেডারেল সরকার অচলাবস্থার কারণে বিমান চলাচল সীমিত রাখার নির্দেশ দেয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং সংস্থা ফ্লাইটওয়্যারের তথ্যে জানা যায়, আরও প্রায় ৬ হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। শুক্রবার এই সংখ্যা ছিল ৭ হাজারের বেশি। এই সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানায়, ৪০টি ব্যস্ত বিমানবন্দরে বিমান চলাচলের সক্ষমতা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হবে। কারণ, সরকারের অচলাবস্থায় বেতন না পাওয়া আকাশপথ নিয়ন্ত্রকেরা (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার) অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করছেন।
রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা এখনো কংগ্রেসে বাজেট নিয়ে তৈরি হওয়া অচলাবস্থা দূর করতে পারছে না। ১ অক্টোবর শুরু হওয়া এই স্থবিরতা চলতে থাকায় রোববার ৩৯তম দিনে পা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের দীর্ঘতম সরকার অচলাবস্থা। দুই দলের সিনেটররা সপ্তাহান্তে ওয়াশিংটনে আলোচনায় বসেছেন। তাঁদের লক্ষ্য সরকার পুনরায় চালুর পথ খোঁজা। কারণ, খাদ্যসহায়তা কমে যাওয়া ও ফ্লাইট বিপর্যয়ে এখন সাধারণ মানুষও প্রভাবিত হচ্ছে।
শনিবার এক বিবৃতিতে আমেরিকান এয়ারলাইনস ওয়াশিংটনের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানায়, ‘অচলাবস্থা শেষ করতে দ্রুত সমাধানে পৌঁছান।’
নিউ জার্সির নিউয়ার্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার সময়। শনিবার বিকেলের হিসাব অনুযায়ী, সেখানে আগমনকারী ফ্লাইট গড়ে চার ঘণ্টার বেশি দেরি করছিল, আর প্রস্থানকারী ফ্লাইটের গড় বিলম্ব ছিল দেড় ঘণ্টা। শনিবার সর্বাধিক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে নর্থ ক্যারোলাইনার শার্লট/ডগলাস আন্তর্জাতিক, নিউয়ার্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক ও শিকাগোর ও’হেয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
এফএএর তথ্যে দেখা গেছে, নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইটগুলো গড়ে তিন ঘণ্টা, আটলান্টার হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন বিমানবন্দর থেকে আড়াই ঘণ্টার বেশি এবং লা-গার্ডিয়া বিমানবন্দর থেকে প্রায় এক ঘণ্টা বিলম্বিত হচ্ছিল।
আগামী ২৭ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে থ্যাংকস গিভিং ছুটি। এটি বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত ভ্রমণ মৌসুমগুলোর একটি। এবার শুধু বাণিজ্যিক ফ্লাইটই নয়, প্রাইভেট জেটের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। শনিবার এক্সে শেয়ার করা পোস্টে পরিবহন সচিব ডাফি জানান, বড় বিমানবন্দরগুলোতে প্রাইভেট জেটের সংখ্যা কমানো হয়েছে। তাদের এখন ছোট বিমানবন্দর বা রানওয়ে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, যাতে নিয়ন্ত্রকেরা বাণিজ্যিক ফ্লাইটে মনোযোগ দিতে পারেন।
তবে সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এফএএ জানিয়েছে, ধীরে ধীরে ফ্লাইট কমানো হবে—শুক্রবার থেকে ৪ শতাংশ, ১১ নভেম্বর ৬ শতাংশ, ১৩ নভেম্বর ৮ শতাংশ এবং ১৪ নভেম্বর থেকে পূর্ণ ১০ শতাংশ কমানো হবে। সংস্থাটি বলেছে, এই সিদ্ধান্ত নিরাপত্তা রক্ষার জন্য জরুরি। কারণ, নিয়ন্ত্রকেরা বেতন ছাড়া কাজ করে অতিরিক্ত চাপের মধ্যে রয়েছেন।
আইনের কারণে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের বেতন ছাড়া কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। অনেকে অসুস্থতার অজুহাতে ছুটি নিচ্ছেন বা জীবিকা চালাতে দ্বিতীয় চাকরি করছেন। তাঁরা ১৪ লাখ সরকারি কর্মীর অংশ, যাঁরা কেউ বিনা বেতনে কাজ করছেন, কেউ বাধ্যতামূলক ছুটিতে আছেন। বিমান চলাচলে বিপর্যয়ের আরেক কারণ হলো পরিবহন নিরাপত্তা সংস্থার (টিএসএ) ৬৪ হাজার কর্মীর বেশির ভাগই অচলাবস্থার সময় কোনো বেতন পাচ্ছেন না।
এর আগে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় আগের সরকার অচলাবস্থায় দেখা গিয়েছিল, টিএসএ কর্মীদের প্রায় ১০ শতাংশ বিনা বেতনে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।