দুই সপ্তাহ ধরে চলা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের শাটডাউন তথা অচলাবস্থা দেশের অর্থনীতিতে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ক্ষতির কারণ হতে পারে। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার রাতে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের এক কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে তারা ট্রেজারি সেক্রেটারি তথা মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের আগের বক্তব্য সংশোধন করেছে। বেসেন্ট বলেছিলেন প্রতিদিনই ১৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, স্কট বেসেন্ট বুধবার দুটি অনুষ্ঠানে ভুল ওই হিসাব তুলে ধরেন। তিনি সেখানে বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির উদ্দেশে বলেন, তারা যেন ‘নায়ক’ হয়ে রিপাবলিকানদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শাটডাউন শেষ করেন।
বেসেন্টের বক্তব্যের সংশোধনী দিয়ে ট্রেজারি বিভাগের ওই কর্মকর্তা জানান, ক্ষতির এই হিসাব হোয়াইট হাউসের কাউন্সিল অব ইকোনমিক অ্যাডভাইজার্সের এক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে বেসেন্ট বলেন, শাটডাউন এখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ‘মূল কাঠামোতেও আঘাত করতে’ শুরু করেছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যে বিনিয়োগের ঢল নেমেছে—বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই)—তা এখনো টেকসই এবং আরও বাড়ছে, কিন্তু ফেডারেল সরকারের শাটডাউন এখন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বেসেন্ট বলেন, ‘বাজারে চাহিদা আছে, কিন্তু প্রেসিডেন্ট (ডোনাল্ড) ট্রাম্প তাঁর নীতির মাধ্যমে এক বিশাল উত্থান ঘটিয়েছেন। এখন আমাদের পথের একমাত্র বাধা হলো এই সরকার অচলাবস্থা।’ তিনি বলেন, রিপাবলিকান কর আইন ও ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কনীতি বিনিয়োগের এই উত্থান অব্যাহত রাখবে এবং প্রবৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করবে।
বেসেন্টের ভাষায়, ‘আমরা এমন এক সময়ের মধ্যে থাকতে পারি, যেমন উনিশ শতকের শেষ দিকে রেলপথের বিকাশ হয়েছিল, বা নব্বইয়ের দশকে ইন্টারনেট আর অফিস প্রযুক্তির বিস্ফোরণ ঘটেছিল।’
বেসেন্ট আরও বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া ২০২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি আগের বছরের তুলনায় কমেছে। ২০২৪ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ১ দশমিক ৮৩৩ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো অঙ্ক জানাননি, তবে বলেন যে আগামী কয়েক বছরে ঘাটতির অনুপাত জিডিপির তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এখনো ট্রেজারি বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে বার্ষিক ঘাটতির হিসাব প্রকাশ করেনি।
গত সপ্তাহে কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস (সিবিও) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ২০২৫ অর্থবছরে ঘাটতি সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৮১৭ ট্রিলিয়ন ডলারে, যদিও ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে শুল্ক রাজস্ব বেড়েছে ১১৮ বিলিয়ন ডলার। বেসেন্ট সিএনবিসির অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ঘাটতি-জিডিপি অনুপাত এখন পাঁচের ঘরে রয়েছে।’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি কি চান এই অনুপাত তিনের ঘরে নামুক? জবাবে বেসেন্ট বলেন, ‘হ্যাঁ, তা এখনো সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি আরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারি, কম খরচ করি এবং ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখি, তাহলে অনুপাতটি নামানো সম্ভব হবে।’