বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ‘নোবেল পুরস্কার’ জয়ের খবরটি যখন সারা পৃথিবীর মানুষ জেনে গেল, ফ্রেড র্যামসডেল তখন একেবারে মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে, অজানার পথে! স্ত্রী লরা ও’নিলের সঙ্গে তিনি তখন রকি পর্বতমালায় ট্রেকিংয়ে ছিলেন। মার্কিন ইমিউনোলজিস্ট র্যামসডেল এবার (২০২৫) চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন।
তাঁর কর্মস্থল জানিয়েছে, র্যামসডেল তাঁর জীবনের সেরা সময় কাটাচ্ছিলেন, তাই তাঁকে নোবেল পাওয়ার খবরটি যথাসময়ে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ১২ ঘণ্টা ধরে তিনি কোনোভাবেই জানতে পারেননি যে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে পাহাড়ি পথে হঠাৎ মোবাইলে নেটওয়ার্ক ফিরে আসার পর র্যামসডেল আর তাঁর স্ত্রী ও’নিলের ফোন যেন থামছিলই না। প্রথমে ও’নিল একটি কল রিসিভ করেন এবং র্যামসডেলের দিকে চিৎকার করে ওঠেন—‘তুমি নোবেল পেয়েছ!’ র্যামসডেল তখন চরম অবিশ্বাস নিয়ে বলেন—‘না, না, আমি না।’ কিন্তু সেটাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হলো।
শরীর কীভাবে প্রতিরোধব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে, সে বিষয়ে যুগান্তকারী গবেষণার জন্য এবার নোবেল পেলেন মার্কিন ইমিউনোলজিস্ট র্যামসডেল। তাঁর সঙ্গে এই সম্মান ভাগ করে নিয়েছেন মার্কিন গবেষক মেরি ব্রাঙ্কো ও জাপানের শিমন সাকাগুচি। তাঁদের গবেষণা মূলত ‘রেগুলেটরি টি সেল’ নিয়ে। এটি এমন এক ধরনের কোষ, যা শরীরে নিজের টিস্যুকে ভুলবশত আক্রমণ করা ইমিউন কোষগুলোকে দমন করে। এই আবিষ্কার অটোইমিউন রোগের চিকিৎসায় নতুন দিক উন্মোচন করেছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য টাইমসকে নোবেল কমিটির সচিব জেনারেল টমাস পারলম্যান জানিয়েছেন, তাঁরা র্যামসডেলকে ফোনে না পেয়ে একটি বার্তা পাঠিয়ে রেখেছিলেন। এতে লেখা ছিল—‘যদি সুযোগ পান, দয়া করে ফোন করুন।’ র্যামসডেল অবশ্য বার্তাটি দেখে ফোন করেছিলেন, কিন্তু সুইডেনে তখন গভীর রাত!
নোবেল কমিটি সাধারণত পুরস্কার ঘোষণার আগে বিজয়ীদের জানায় না। ঘোষণার দিন সকালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং এক ঘণ্টার মধ্যে বিজয়ীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। এ সময়ের মধ্যে সবার সঙ্গে যে সংযোগ সম্ভব হয়, তা কিন্তু নয়। যেমন—২০১৩ সালে পদার্থবিদ পিটার হিগস নিজের সম্ভাব্য জয়ের কথা জেনেও ফোন বন্ধ রেখে লাঞ্চে গিয়েছিলেন। পরে রাস্তায় এক পথচারীর মুখে জানতে পারেন, তিনি সত্যিই নোবেল জিতেছেন।