পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কারাগারে মারা গেছেন—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন তাঁর তিন বোন। কিন্তু রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারের বাইরে তাঁরা ‘নৃশংস’ পুলিশি হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ইমরানের বোন নুরিন খান, আলীমা খান ও ডা. উজমা খান অভিযোগ করেছেন, তাঁদের সঙ্গে উপস্থিত পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থকদেরও নির্মমভাবে প্রহার করেছে পুলিশ।
ইমরান খান ২০২৩ সাল থেকে আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। তাঁর বোনের অভিযোগ, তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর তাঁরা দেখা করার অনুমতি চাইলে জেল গেটের বাইরে বসে থাকা অবস্থায় পুলিশের ‘নৃশংস হামলা’র শিকার হন।
পিটিআই দাবি করেছে, দলের সমর্থক ও ইমরানের তিন বোন শান্তিপূর্ণভাবে কারাগারের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় দাঙ্গা পুলিশের সদস্যরা হঠাৎ তাঁদের ওপর ওপর আক্রমণ চালান। পিটিআই অভিযোগ করেছে, ‘ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে চাওয়ার অপরাধে’ এই হামলা চালানো হয়েছে। ঘটনাটির স্বাধীন তদন্তেরও দাবি জানিয়েছে পিটিআই।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই নৃশংস হামলার অভিযোগে ইমরানের বোনেরা লিখিত অভিযোগ করেছেন। পাঞ্জাবের পুলিশপ্রধান উসমান আনোয়ারকে পাঠানো এক চিঠিতে ইমরানের বোনেরা বলেছেন, হামলাটি ছিল ‘পূর্বপরিকল্পিত, সংগঠিত এবং একেবারে বিনা উসকানিতে’।
নুরিন খান লিখেছেন, ‘আমরা তাঁর (ইমরানের) স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলাম। আমরা কোনো রাস্তা অবরোধ করিনি, জনসাধারণের চলাচলে বাধা দিইনি, কিংবা কোনো বেআইনি কাজে জড়াইনি। তবু হঠাৎ করে ওই এলাকার স্ট্রিট লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপরই পাঞ্জাব পুলিশের সদস্যরা আমাদের ওপর নৃশংস ও সংগঠিত আক্রমণ চালায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বয়স ৭১ বছর। এই বয়সে আমাকে চুল ধরে টেনে মাটিতে ফেলা হয়, রাস্তা দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।’ ইমরানের বোনের ভাষ্য, সেখানে উপস্থিত অন্যান্য নারী সমর্থককেও থাপ্পড় দিয়ে, ধাক্কাধাক্কি করে এবং টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তাঁরা বলেন, পুলিশি আচরণ গত তিন বছরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের ওপর চালানো ‘অনিয়ন্ত্রিত ও নির্বিচার সহিংসতা’র ধারাবাহিকতার অংশ। নুরিন খানের বক্তব্যে আরও ছিল, ‘এটি শুধু বেআইনি এবং নৈতিকভাবে ঘৃণ্য নয়, গণতান্ত্রিক সমাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মৌলিক দায়িত্বের সরাসরি পরিপন্থী।’
ইমরানের বোনেরা ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে বিভিন্ন মামলায় কারাবন্দী। এক মাস ধরে তাঁর সঙ্গে কারও সাক্ষাৎ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। এদিকে তাঁর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লেও এখনো সরকার বা কারা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেয়নি।
পিটিআই দাবি করেছে, ইমরান খানকে ‘সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ও একাকী অবস্থায়’ রাখা হয়েছে। দলের আইনজীবীদেরও নিয়মিত ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
তাঁর আইনজীবী দলের সদস্য খালিদ ইউসুফ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখানে জঙ্গলের আইন চলছে। যে দাপট দেখায়, তারই অধিকার আছে, অন্য কারও নেই। এমনকি বই, প্রয়োজনীয় সামগ্রী—কিছুই তাঁকে (ইমরান খান) দেওয়া হচ্ছে না।’
এর আগে খাইবারপাখতুনখাওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সোহেল আফ্রিদিও ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘সাতবার কারাগারে গিয়ে দেখা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।’ পিটিআই বলছে, জেল কর্তৃপক্ষ সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তার নির্দেশেই তাঁকে সাক্ষাৎ করতে দেয়নি।