হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে হিমশিম হামাস, গাজার ‘বাস্তবতা বদলানোর’ হুমকি ইসরায়েলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত একটি এলাকা। ছবি: আনাদোলু

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভাঙার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল। এদিকে হামাস জানিয়েছ—বিশেষ সরঞ্জাম ছাড়া তারা আর কোনো নিহত ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দিতে পারবে না। এরপরই এমন হুঁশিয়ারি দেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল বুধবার রাতে হামাস আরও দুই ইসরায়েলির মরদেহ ফেরত দিয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৯ নিহত জিম্মির মরদেহ ইসরায়েলের হাতে ফিরেছে। ইসরায়েলের দাবি, হামাস যে আরও একটি মরদেহ ফেরত দিয়েছে, তা কোনো ইসরায়েলি জিম্মির নয়।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজা থেকে মিসরের রাফা সীমান্ত পারাপারটি আজ বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে ‘পরবর্তী কোনো সময়ে’ খোলা হবে। জাতিসংঘ ও মানবিক সংস্থাগুলো এ পথকে গাজায় সাহায্য পৌঁছানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা কোগাতের এক মুখপাত্র জানান, রাফা ক্রসিং দিয়ে ভবিষ্যতেও কোনো মানবিক সহায়তা যেতে দেওয়া হবে না, তবে সীমিত ব্যক্তিগত পারাপার চলবে।

ওই মুখপাত্র বলেন, রাফা সীমান্ত দিয়ে কোনো মানবিক সাহায্য পাঠানোর বিষয়ে কখনো কোনো সমঝোতা হয়নি। গাজায় সাহায্য এখনো প্রবেশ করছে অন্য পথ দিয়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনায় গাজায় ‘সম্পূর্ণ মানবিক সহায়তা’ নিশ্চিত করা ও সব জিম্মিকে—জীবিত বা মৃত—ফেরত আনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত। আঞ্চলিক কূটনীতিকেরা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রথম দিকের দিনগুলো ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ ও ‘সংবেদনশীল’ হবে। জিম্মিদের মরদেহ ফেরত ও সাহায্য প্রবেশের মতো বিষয়গুলোই প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবে। ট্রাম্পের পরিকল্পনার অনেক জটিল অংশ নিয়ে এখনো বিস্তারিত আলোচনা হয়নি।

ইসরায়েল ২৮ জন নিহত জিম্মির মরদেহ ফেরত পাওয়ার আশা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, হামাস এখনো বাকি মরদেহগুলো উদ্ধারের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে বিষয়টিতে আস্থা রাখছে না ইসরায়েল। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, যদি হামাস চুক্তির শর্ত না মানে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে ইসরায়েল আবার যুদ্ধ শুরু করবে এবং হামাসকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে গাজার বাস্তবতা পরিবর্তন করবে।

অন্যদিকে হামাসের সামরিক শাখা আল-ক্বাসাম ব্রিগেড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা আমাদের হেফাজতে থাকা সব জীবিত ইসরায়েলি বন্দী ও যেসব মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল, সেগুলো ফেরত দিয়েছি। বাকি মরদেহগুলো উদ্ধারে বিশেষ সরঞ্জাম ও ব্যাপক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’

চুক্তির আওতায় ইসরায়েলকে ৩৬০ জন ফিলিস্তিনির মরদেহও ফেরত দিতে হবে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৯০টি মরদেহ ফেরত দিয়েছে ইসরায়েল। স্থানীয় চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, অনেক মরদেহেই নির্যাতন ও গুলির চিহ্ন রয়েছে।

গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান আহমেদ আল-ফাররা বলেন, প্রায় সব মরদেহেই চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল, হাত বাঁধা ছিল এবং কপালে গুলি করা হয়েছে। প্রায় সবাইকে যেন সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেওয়া নিয়ে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে, যা যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে নতুন করে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া যুক্তরাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে হামাস এখন পর্যন্ত ২০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। এর বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ৭০০ জন গাজা থেকে আটক হয়েছিলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই আনা হয়নি।

হামাসের ওপর চাপ বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, হামাস যদি চুক্তির শর্ত না মানে, তাহলে তিনি ইসরায়েলকে পুনরায় গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করার অনুমতি দিতে পারেন। ট্রাম্প সিএনএনকে ফোনে বলেন, ‘ইসরায়েল আমার নির্দেশ পেলে আবার রাস্তায় নামবে। তারা চাইলে এক মুহূর্তেই হামাসকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে।’

কাৎজের হুমকির পর গতকাল বুধবার রাতে এক মার্কিন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানান, গাজা এখন এমনভাবে ‘ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে’ যে, মরদেহ উদ্ধারে অনেক বাধা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘শুধু চারটি মরদেহ ফেরত আসায় অনেক ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছিল। তবু তারা পরদিনই আরও মরদেহ ফেরত দিয়েছে, যত দ্রুত আমরা তাদের গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছি। আমরা এখন এমন একটি পরিকল্পনা বিবেচনা করছি, যেখানে মরদেহ উদ্ধারকারীদের পুরস্কৃত করা হবে।’

এদিকে মধ্যস্থতাকারী দেশ তুরস্কের গাজায় মরদেহ উদ্ধারে বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে।

হিজাব ছাড়াই ম্যারাথনে দৌড়ালেন নারীরা—ইরানে ২ আয়োজক গ্রেপ্তার

ইসরায়েলি দখলদারত্ব শেষ হলেই অস্ত্র পরিত্যাগ করবে হামাস

ইসরায়েলের অস্ত্র মেলায় ইউরোপ-এশিয়ার ক্রেতাদের ভিড়, বিজ্ঞাপনে গাজা যুদ্ধ

ইসরায়েলকে সরতে বলল কাতার-মিসর-তুরস্ক ও সৌদি, আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের আহ্বান

গাজায় ইসরায়েলি চর শাবাবকে যেভাবে হত্যা করা হয়, ফিলিস্তিনে উল্লাস

গাজা গণহত্যা থেকে মনোযোগ সরাতে আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়াচ্ছে ইসরায়েল: আল–শারা

সিরিয়ায় নতুন বিদ্রোহের প্রস্তুতি—নেপথ্যে আসাদের নির্বাসিত গোয়েন্দাপ্রধান ও চাচাতো ভাই

গাজায় হামাসবিরোধী ইসরায়েলি প্রক্সি গোষ্ঠীর নেতা ইয়াসির আবু শাবাব নিহত, কে তিনি

গাজায় যুদ্ধবিরতি খুব ভালোভাবে চলছে, দ্বিতীয় ধাপ শুরু শিগগির: ট্রাম্প

মার্কিন মধ্যস্থতায় ৪০ বছরের মধ্যে প্রথমবার সরাসরি আলোচনায় লেবানন-ইসরায়েল