ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ড গাজায় প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে হামাসের হাতে থাকা ইসরায়েলি জিম্মি ও ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এই বন্দী–জিম্মি বিনিময় প্রক্রিয়ার পুরোটাই দেখভাল করবে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি। এরই মধ্যে রেড ক্রস কমিটির বাস পৌঁছে গেছে গাজার দেইর এল–বালাহে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (আইসিআরসি) বাস গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ শহরে পৌঁছে গেছে। সেখানে ইসরায়েলি বন্দী ও ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিনিময়ের প্রস্তুতি চলছে।
ইসরায়েল ও গাজার মধ্যে দুই বছরের যুদ্ধ চলাকালীন আগের বিনিময়গুলোর মতো এবারও বন্দীদের প্রথমে রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এরপর তাদের গাজার ভেতরে একটি ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটিতে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা পরীক্ষা করা হবে। তারপর তারা পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলনের জন্য ইসরায়েলে প্রবেশ করবে।
আল জাজিরা আরবিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে হামাসের এক সূত্র জানিয়েছে, বন্দীদের ইতিমধ্যেই গাজার তিনটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, সেখান থেকেই রেড ক্রস কর্মকর্তাদের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে গাজায় আটক থাকা অবশিষ্ট ইসরায়েলি বন্দীদের বিনিময়ে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি গাজা থেকে আটক, যাদের জাতিসংঘ ‘জোরপূর্বক গুম’ হওয়া ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করছে।
আরও ২৫০ জন ফিলিস্তিনি আছেন, যারা ‘ইসরায়েলিদের ওপর হামলা’ বা ‘সহিংসতায়’ জড়িত থাকার অভিযোগে যাবজ্জীবন বা দীর্ঘমেয়াদি সাজা ভোগ করছেন। এই দলের ১৩৫ জনকে গাজায় পাঠানো হবে বা বিদেশে নির্বাসনে রাখা হবে। ১০০ জনকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে পাঠানোর কথা রয়েছে। প্রায় ১৫ জনকে মুক্তি দেওয়া হবে পূর্ব জেরুজালেমে।
অপর দিকে, ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজায় থাকা জীবিত বন্দীদের সবাইকে স্থানীয় সময় আজ সোমবার সকালের দিকেই ফেরত পাওয়ার আশা করছে। অর্থাৎ, মিসরে শুরু হতে যাওয়া গাজা যুদ্ধবিরতি ও পুনর্গঠন সংক্রান্ত শীর্ষ সম্মেলনের আগেই এই বিনিময় সম্পন্ন হতে পারে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপটি নেওয়া হচ্ছে। এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গতকাল রোববার ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র শশ বেদরোসিয়ান বলেন, ইসরায়েল আশা করছে—আজ সোমবার ভোরে বাকি ২০ জন জীবিত বন্দীকে একসঙ্গে ফেরত দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, বন্দীরা ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশের পরই ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি শুরু করবে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েল প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে, যাদের অনেকেই অভিযোগ ছাড়াই আটক আছেন। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ২৫০ জন ইসরায়েলি আদালতে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত। তবে ফিলিস্তিনিদের বহুদিনের দাবি—কারাবন্দী নেতা মারওয়ান বারঘৌতিকে মুক্তি দেওয়া হবে না বলে ইসরায়েল জানিয়েছে।