জাতিসংঘ বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠনে সময় লাগবে অন্তত কয়েক দশক। আগামী কয়েক দশকে এই পুনর্গঠনের জন্য প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলার লাগবে। পাশাপাশি সতর্ক করেছে, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আসন্ন অর্থনৈতিক ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলন (আঙ্কটাড) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অবিরাম বোমাবর্ষণে গাজায় সৃষ্টি হয়েছে এক ‘মানবসৃষ্ট অতল গহ্বর।’ ২০২৩–২৪ সময়কালে এখানকার অর্থনীতি ৮৭ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। ইসরায়েলের পদ্ধতিগত ধ্বংসযজ্ঞ ও অর্থনৈতিক অবরোধ গাজার মাথাপিছু জিডিপিকে ঠেলে দিয়েছে মাত্র ১৬১ ডলারে, যা বিশ্বের সর্বনিম্নগুলোর মধ্যে একটি।
এদিকে, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের লাগাতার হামলাও ফিলিস্তিনি অর্থনীতিকে গভীর সংকটে ঠেলে দিচ্ছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের কয়েক দশকের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এক আঘাতে মুছে গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ফলে যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, তা ১৯৬০ সালের পর বৈশ্বিকভাবে সবচেয়ে ভয়াবহ দশটির একটি। গাজার পরিস্থিতি আরও আলাদা; এটি নথিভুক্ত ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুতর অর্থনৈতিক বিপর্যয়।’
রোববার জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি-প্রক্রিয়ার উপ বিশেষ সমন্বয়কারী রামিজ আলাকবারভ বলেন, গাজায় পরিস্থিতি এখনও ‘ভয়ংকরভাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন।’ তিনি দ্রুত আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান, কারণ মানুষ এখনো ‘অসহনীয় জীবনযাপন’ করছে।
তিনি জানান, ১৭ লাখের বেশি মানুষ এখনো বাস্তুচ্যুত; অগণিত মানুষ গাদাগাদি করে শরণার্থী কেন্দ্রে দিন কাটাচ্ছে, যেখানে পরিষ্কার পানি, খাবার ও চিকিৎসার প্রবল সংকট। আলাকবারভ বলেন, ‘জাতিসংঘ ও তার সহযোগী সংস্থাগুলো এখনো তাবু ও কম্বলসহ আশ্রয় সামগ্রী সরবরাহে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। শীতকাল ঘনিয়ে আসায় এসব বিলম্ব দ্রুত কাটাতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ ও পানির অভাবে হাসপাতালগুলো টালমাটাল অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। ইসরায়েলকে তিনি অনুরোধ করেন সীমান্তপথের ধারণক্ষমতা বাড়াতে এবং জাতিসংঘসহ জরুরি ত্রাণসামগ্রীর অনুমোদন দ্রুততর করতে।
গাজার সরকারি জনসংযোগ কার্যালয় জানায়, অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক ঢোকার কথা থাকলেও ইসরায়েল এখন মাত্র ২০০ ট্রাক ঢুকতে দিচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার বেশির ভাগ পরিবারেরই এখন ন্যূনতম খাদ্য কিনে খাওয়ার সক্ষমতা নেই। জাতিসংঘ আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি অভিযানের পুনরাবৃত্তি, চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ এবং বেআইনি বসতি নির্মাণের কারণে পশ্চিম তীরের অর্থনীতিও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে।
জাতিসংঘ জানায়, চলাচলের ওপর এই বিধিনিষেধ ৩৩ লাখের বেশি মানুষের ওপর প্রভাব ফেলছে। এতে পরিবহন ব্যয় বাড়ছে, যাতায়াতে সময় দ্বিগুণ হচ্ছে, বাজার, কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় পৌঁছানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অর্থনৈতিক অধঃপতন ঠেকাতে, মানবিক সংকট কমাতে ও টেকসই উন্নয়ন এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তির ভিত্তি গড়তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবিলম্বে এবং ব্যাপক হস্তক্ষেপ জরুরি।’
এতে আরও বলা হয়, ‘অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের জন্য একটি সমন্বিত পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সহায়তা সমন্বিতভাবে বাড়াতে হবে, আর্থিক হস্তান্তর পুনরুদ্ধার করতে হবে, এবং বাণিজ্য, চলাচল ও বিনিয়োগে আরোপিত বাধা শিথিল করতে হবে।’