অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পর এবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পর্তুগাল। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে পর্তুগালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আগামী সপ্তাহের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের আগেই এ-সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটি দেওয়া হবে।
বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আগামী রোববার ২১ সেপ্টেম্বর স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এর এক দিন পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন শুরু হবে।
পর্তুগালের কোরেও ডা মানহা সংবাদপত্রের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশটির কেন্দ্র-ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টেনেগ্রো এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে রাষ্ট্রপতি ও সংসদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন।
চলতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্য সফরের সময় পর্তুগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো রাঙ্গেল বলেছিলেন, তাঁর দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে।
প্রতিবেশী দেশ স্পেনের বামপন্থী সরকার ২০২৪ সালের মে মাসে আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ের সঙ্গে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয় এবং অন্যান্য ইইউভুক্ত দেশকে একই কাজ করার আহ্বান জানায়। তবে পর্তুগাল এ বিষয়ে আরও সতর্ক পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা প্রথমে অন্যান্য ইইউভুক্ত দেশের সঙ্গে একটি সাধারণ অবস্থানে পৌঁছাতে চেয়েছিল।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ সদস্যের মধ্যে কেবল অল্প কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই প্রাক্তন কমিউনিস্ট রাষ্ট্র, পাশাপাশি সুইডেন ও সাইপ্রাসও রয়েছে।
গত জুলাই মাসে পর্তুগিজ সরকার প্রথমবারের মতো জানায় যে তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এর কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করে, সংঘাতের ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতি’, মানবিক সংকট এবং ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দখলের ইসরায়েলের বারবার হুমকি তাদের এই সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
পর্তুগালের স্বীকৃতির ঘোষণাটি এমন সময় এসেছে, যখন জাতিসংঘের এক যুগান্তকারী তদন্তে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের অভিযান গণহত্যার শামিল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৬৫ হাজার ১৪১ জন নিহত এবং ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯২৫ জন আহত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজার হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে ভিসা দিতে অস্বীকার করার পর, গতকাল শুক্রবার পর্তুগালসহ ১৪৫টি দেশ ভিডিওর মাধ্যমে আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টকে ভাষণ দেওয়ার সুযোগ করে দিতে ভোট দেয়। নাউরু, পালাউ, প্যারাগুয়ে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র—এই পাঁচ দেশ এর বিপক্ষে ভোট দেয়, আর ছয়টি দেশ ভোট থেকে বিরত থাকে।
২০১২ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনের পর্যবেক্ষক মর্যাদাকে ‘সত্তা’ থেকে উন্নীত করে ‘অ-সদস্য রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে কার্যত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়।
এ বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত জাতিসংঘের মোট সদস্য দেশের ৭৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এবার পর্তুগালও এই দেশগুলোর সঙ্গে যুক্ত হবে।
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগের কঠোর সমালোচনা করেছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে গত বছর ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মটরিচ সতর্ক করে বলেছিলেন, যতগুলো দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে, তার প্রতিটির জন্য অধিকৃত পশ্চিম তীরে একটি করে নতুন অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপন করা হবে।