২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামের পর ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক’ ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষ গাজার দক্ষিণাঞ্চলে চলে গেছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। স্থল অভিযান শুরুর আশঙ্কায় পুরো ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘নজিববিহীন শক্তি’ দিয়ে আঘাত হানার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
মাত্র ২৪ ঘণ্টার মতো স্বল্প সময়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল থেকে বিশাল জনগোষ্ঠীর স্থানান্তর সম্ভব নয় এবং এতে ‘ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়’ সৃষ্টি হবে বলে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ সতর্ক করলেও হামাসকে ‘নিশ্চিহ্ন করার’ প্রতিজ্ঞায় অভিযানের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গাজা উপত্যকা ঘিরে থাকা ইসরায়েলের রিজার্ভ বাহিনীর সৈন্যরা ‘পরবর্তী পর্যায়ের অভিযানের’ জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বলে শনিবার ভোরে এক ভিডিও কনফারেন্স জানান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোনাথন কনরিকাস।
‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফিলিস্তিন বেসামরিক মানুষকে আমরা দক্ষিণে চলে যেতে দেখেছি’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, গাজার চারপাশ ঘিরে আছে ইসরায়েলি সেনারা। যেকোনো কাজের জন্য, যেকোনো লক্ষ্যে হামলা চালাতে তাঁরা প্রস্তুত।
গত শনিবার (৭ অক্টোবর) ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলায় ১ হাজার ৩০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। এ ছাড়া অনেককে জিম্মি করা হয়েছে। এর পর থেকে হামাস নিয়ন্ত্রিত ২৩ লাখ ফিলিস্তিনির আবাস গাজা উপত্যকা অবরুদ্ধ করে নজিরবিহীন বিমান হামলায় গাজার অন্তত ১ হাজার ৯০০ মানুষকে হত্যা করেছে।
এর সঙ্গে স্থলভাগে সামরিক অভিযান চালানোর লক্ষ্যে গাজার ১১ লাখ মানুষকে দক্ষিণে সরে যেতে গত শুক্রবার ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় ইসরায়েলিরা। তবে হামাস শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শপথ করে গাজাবাসীকে অবস্থানের আহ্বান জানিয়েছে। ওই আলটিমেটামের মেয়াদ আজ সকাল ৮টায় পার হয়ে গেছে।
সরে যাওয়ার সময় দিলেও বিমান হামলা বন্ধ করেনি ইসরায়েল। এর মধ্যে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আশ-শিফা হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছে।
আগ্রাসন থেকে বাঁচতে অন্তত ৩৫ হাজার মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার কথা জানান পরিচালক মোহাম্মদ আবু স্লিমা। ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘আতঙ্ক ও ভীতি পুরো জনগোষ্ঠীকে গ্রাস করেছে।’
লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোনাথন কনরিকাস বলেন, ‘এই যুদ্ধে আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হামাস ও এর সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করা এবং মৌলিকভাবে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটানো, যাতে হামাস আর কখনোই ইসরায়েলি বেসামরিক ও সৈন্যদের ওপর কোনো ধরনের আঘাতের সক্ষমতা না রাখে।’ ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলছে, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর ছয় দিন পর গতকাল প্রথমবারের মতো ট্যাংকের নিরাপত্তা নিয়ে গাজায় ঢুকে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলের পদাতিক বাহিনীর সদস্যরা।
জিম্মি একদল নিখোঁজ ইসরায়েলির মরদেহ উদ্ধার এবং অ্যান্টি-ট্যাংক গাইডেড মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হামাসের ইউনিট ধ্বংস করতে এ অভিযার চালানো হয়। এর মধ্যে শনিবার ড্রোন হামলা চালিয়ে ‘লেবানন থেকে ইসরায়েলে অনুপ্রেবেশের’ বেশ কয়েক সশস্ত্র হামাস সদস্যকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল।
এর আগে শুক্রবার শুরু হওয়া ইহুদি প্রার্থনা অনুষ্ঠান সাবাতে বিরল এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা এমন শক্তি দিয়ে শত্রুর ওপর আঘাত হানব, আগে কখনো দেখা যায়নি। আমি জোর দিয়ে বলছি, এটা সবে শুরু মাত্র।’