শীত–বৃষ্টি গাজাজুড়ে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ইসরায়েল এখনো তাবু ও জরুরি আশ্রয়সামগ্রী প্রবেশে বাধা দেওয়ায় শত শত হাজার মানুষ ঠান্ডা, কাদা আর টিনের মতো ধারালো বাতাসের ভেতর জীবন বাঁচাতে হিমশিম খাচ্ছে।
মানবিক সংস্থাগুলো বহুদিন ধরে সতর্ক করে আসছে, উপকূলের এই উপত্যকায় তাবুতে থাকা মানুষ শীত সামলানোর মতো কিছুই হাতে নেই। এর ওপর গত দুই বছরের ইসরায়েলি হামলায় গাজায় অন্তত ১ লাখ ৯৮ হাজার স্থাপনা ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, বারবার স্থানচ্যুত হওয়া পরিবারগুলোর অবস্থাই এখন সবচেয়ে নাজুক।
গাজা সিটি থেকে আল–জাজিরাকে এক হতাশ মা জানিয়েছেন, “সকাল থেকে কাঁদছি।” ভারি বৃষ্টিতে রাতে তার তাবু ডুবে গেছে। দুই সন্তান নিয়ে তিনি এখন সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ।
তার স্বামীসহ পরিবারের কয়েকজন ইসরায়েলের “গণহত্যামূলক যুদ্ধ”-এ নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, “একটা ভালো তাবু চাই। একটা ম্যাট্রেস আর একটা কম্বল। আমার শিশুর জন্য পোশাক দরকার। কাউকে ডাকতে পারি না… কেউ নেই সাহায্য করার।”
জাতিসংঘ ও মানবিক সংস্থাগুলোর অনুরোধ সত্ত্বেও ইসরায়েল এখনো সহায়তা প্রবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখেছে। দুই বছরের যুদ্ধে ৬৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যদিও ১০ অক্টোবর হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, তবুও সীমান্তে কড়াকড়ি কমেনি।
সহায়তাসংস্থাগুলোর হিসাবে শীতের শুরুতে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার পরিবার, মোট প্রায় ১৫ লাখ মানুষ, এখন সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে। ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, তাদের কাছে ১৩ লাখ মানুষের জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয়সামগ্রী মজুত আছে, কিন্তু ইসরায়েলের অনুমতি না থাকায় সেগুলো গাজায় ঢোকানো যাচ্ছে না।
শনিবার ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজারিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “গাজায় এখন ঠান্ডা আর ভিজে অবস্থা। বাস্তুচ্যুত মানুষ বৃষ্টির আর শীতের সামনে সম্পূর্ণ অসহায়।”
তার ভাষায়, নড়বড়ে তাবুগুলো “পানি ঢুকলেই ভেঙে পড়ে”, আর মানুষের অল্প কিছু জিনিসও ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। তিনি সতর্ক করেন, “আরো আশ্রয়সামগ্রী জরুরি ভিত্তিতে দরকার।”
গাজার মধ্যাঞ্চলের আয-জুয়াইদা এলাকা থেকে আল–জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খাদরি জানিয়েছেন, বহু মানুষ জানেনই না কোথায় যাবেন। তাদের বাড়িঘর ধ্বংস, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ভর্তি; তাই কাদা–পানিতে ভিজে থাকা তাবু ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
তিনি বলেন, “অনেক বাবা–মা তাদের সন্তানদের শীতের পোশাক, জুতো, এমনকি স্যান্ডেলও কিনতে পারছেন না। পরিবারগুলো সম্পূর্ণ অসহায়।”
শনিবার রাতেই দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসের দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে ইসরায়েলি বাহিনী ফ্লেয়ার ছোড়ে। সাধারণত শত্রুর অবস্থান চিহ্নিত করা বা হামলার আগাম সংকেত দিতেই এ ধরনের আলো ফেলা হয়।
এর আগে যুদ্ধবিরতির “হলুদ রেখা”র ভেতরে এবং গাজা সিটিতেও ইসরায়েল বিমান হামলা চালায়।