ইসরায়েল গত মাসে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর ৪৩ দিনে প্রায় ৫০০ বার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং এসব হামলায় ৩৩৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজা কর্তৃপক্ষ। গাজার সরকারি জনসংযোগ দপ্তর এসব লঙ্ঘনকে ‘পদ্ধতিগত’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তারা বলেছে, এসব ঘটনা অঞ্চলটির ‘স্থিতিশীলতার সম্ভাবনাকে’ বিপন্ন করছে।
লন্ডন থেকে প্রকাশিত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইয়ের খবরে বলা হয়েছে, গত শনিবার গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে একাধিক ইসরায়েলি বিমান হামলার পর এই বিবৃতি দেয় জনসংযোগ দপ্তর। হামলাগুলো হয়েছে এমন এলাকায়, যেগুলো যুদ্ধবিরতির অন্তর্ভুক্ত এবং ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত শনিবারের হামলায় অন্তত ২১ জন মানুষ নিহত হয়েছেন।
এর ফলে, গত ১১ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩৯। আহত হয়েছেন ৮৭১ জন। হামাসের অভিযোগ, ইসরায়েল ‘অজুহাত তৈরি করে’ হামলা চালাচ্ছে এবং চুক্তিকে দুর্বল করে যুদ্ধবিরতি ভাঙার চেষ্টা করছে, যাতে আবার সেই দুই বছরের জাতিগত নিধনের যুদ্ধ শুরু করা যায়।
হামাসের বক্তব্য, ইসরায়েল চুক্তির শর্তের বিরুদ্ধে গিয়ে মাঠে এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা শেষ পর্যন্ত একটি নতুন অবস্থান চাপিয়ে দেওয়া বা ‘ফেইট অ্যাকমপ্লি বা অপরিবর্তনীয় বাস্তবতা’ তৈরি করার কৌশল। চুক্তি রক্ষায় হস্তক্ষেপে মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাস। আল-জাজিরা জানিয়েছে, শনিবারের হামলার পর হামাস মধ্যস্থতাকারীদের কাছে ‘ক্ষুব্ধ বার্তা’ পাঠিয়েছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ পাল্টা অভিযোগ এনেছে, হামাসই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, তাদের সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে, যদিও কেউ আহত হয়নি এবং ঘটনাটির দায় কোনো ফিলিস্তিনি সংগঠন স্বীকার করেনি। হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে সরে গেছে—ইসরায়েলি এমন দাবি গোষ্ঠীটির কর্মকর্তারা অস্বীকার করেছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রকাশ করা এক ভিডিও দেখা যায়, এক ব্যক্তি ভিডিওর ফ্রেমের বাইরে থাকা একটি লক্ষ্যবস্তুতে গুলি করছেন। বাহিনীর দাবি, তিনি ইসরায়েলি সেনাদের দিকে গুলি চালাচ্ছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এর অবস্থান, সময় কিংবা ভিডিওর অন্য কোনো তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
হামাস কর্মকর্তা ইজ্জত আল-রিশক জানান, ওই ব্যক্তি হামাসের সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি, ওই ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করতে ইসরায়েলকে চাপ দিতে মধ্যস্থতাকারী এবং যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানান
শনিবারের এই হামলা ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের সর্বশেষ উদাহরণ। গাজার সরকারি জনসংযোগ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১১ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৯৭টি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ে ৩৩৯ জনকে হত্যার পাশাপাশি ইসরায়েলি বাহিনী আটক করেছে ৩৫ জনকে। এর মধ্যে রয়েছে ১৪২টি সরাসরি গুলি চালানো, ২১টি স্থল অনুপ্রবেশ, আকাশ, স্থল ও গোলাবর্ষণ মিলিয়ে ২২৮টি হামলা এবং ১০০টি বাড়ি ও বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংসের ঘটনা।
এ ছাড়া, ইসরায়েল এখনো মিসরগামী রাফাহ সীমান্ত বন্ধ রেখেছে, যার ফলে হাজার হাজার গুরুতর আহত মানুষ দেশ ছাড়তে পারছেন না। যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী সীমান্ত কয়েক দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণভাবে খুলে দেওয়ার কথা ছিল। এটিও চুক্তি লঙ্ঘন। ইসরায়েল খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রবেশের পথও সীমিত করে রেখেছে। প্রতিদিন গড়ে মাত্র ১৫০টি সাহায্যবাহী ট্রাক ঢুকতে পারছে। চুক্তিতে বলা ছিল, কোনো বাধা ছাড়াই প্রতিদিন ৬০০টি ট্রাক প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে।