ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি (২০১৩–২০২১) বর্তমানে কোনো সরকারি পদে নেই। গত বছর তাঁকে নির্বাচনে প্রার্থী হতেও বাধা দেয় দেশটির সর্বোচ্চ নেতার নিয়ন্ত্রণাধীন ‘গার্ডিয়ান কাউন্সিল’। তারপরও গত এক বছরের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সংকটকে কাজে লাগিয়ে আবারও নিজেকে সামনে নিয়ে এসেছেন রুহানি।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) আমিরাত-ভিত্তিক দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বক্তৃতা ও সাক্ষাৎকারে রুহানি তাঁর শাসনামলকে সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির কথা তিনি উল্লেখ করেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রথম পদক্ষেপ ছিল।
একই সঙ্গে বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ও বিপ্লবী গার্ড (আইআরজিসি) এর নীতির সমালোচনা করছেন রুহানি। এমনকি এক সাহসী মন্তব্যে তিনি বলেছেন—সাম্প্রতিক ১২ দিনের ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় জনগণ দেশকেই সমর্থন করেছে, কোনো শাসকগোষ্ঠীকে নয়। তাঁর এই বক্তব্য সরাসরি ইরান সরকারের প্রচলিত কাঠামোকেই চ্যালেঞ্জ করে।
এদিকে ৮৬ বছর বয়সী খামেনির পর নেতৃত্ব পরিবর্তনের সম্ভাবনা ঘিরে ইতিমধ্যে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রুহানি নিজেকে এক বাস্তববাদী ও সংস্কারমুখী বিকল্প হিসেবে তুলে ধরতে চান—যিনি পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত ও অভ্যন্তরীণ দমননীতি কিছুটা শিথিল করতে পারেন।
তবে রুহানির সম্ভাব্য উত্থান কঠোরপন্থীদের আতঙ্কিত করেছে। সম্প্রতি একটি ভিডিও ফাঁস হয়, যেখানে রুহানির রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ও সাবেক উপদেষ্টা আলি শামখানির মেয়েকে বিয়ের অনুষ্ঠানে খোলামেলা পোশাকে দেখা গেছে। শামখানির কন্যার এমন পোশাক দেখে রক্ষণশীল মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কিন্তু শামখানির সমর্থকেরা অভিযোগ করেছেন, ওই ভিডিও ফাঁসের পেছনে রুহানির শিবিরের হাত রয়েছে।
এরপর থেকেই আইআরজিসি-এর শীর্ষ নেতারা রুহানির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলি জাফারি অভিযোগ করেছেন, রুহানি তাঁর আমলে বিপ্লবী গার্ডের বাজেট সীমিত করেছিলেন। রুহানি ও তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফকে রাশিয়ার সমালোচনার জন্য অভিযুক্ত করেছেন সংসদের বর্তমান স্পিকার ও সাবেক আরেক কমান্ডার বাঘের গালিবাফ। এমনকি সংসদে কিছু সদস্য ‘রুহানির বিচার চাই’ ও ‘ফেরেদিউনের মৃত্যু হোক’ (রুহানির জন্মনাম ফেরেদিউন) বলে স্লোগান দিয়েছেন।
তবে এসবের প্রতিক্রিয়ায় রুহানির ঘনিষ্ঠ সহযোগী হেসামউদ্দিন আশনা পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বিপ্লবী গার্ড যেন ‘প্যান্ডোরার বাক্স’ না খোলে। তাহলে তাদের দুর্নীতির নথি প্রকাশ পাবে। এর আগেও গার্ডের দুর্নীতি নিয়ে ফাঁস হওয়া অডিও আলোড়ন তুলেছিল।
এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি নিজে সম্প্রতি দলগুলোর ঐক্য কামনা করেছেন। কিন্তু বিশ্লেষকেরা মনে করেন, তাঁর জীবিত থাকা পর্যন্ত হয়তো লড়াই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে তাঁর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার ঘিরে যে সংকট আসছে, তা ইরানের রাজনীতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলবে।