ইসরায়েল লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ উপশহরে এক হামলায় হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ কমান্ডারকে হত্যা করেছে। এই ঘটনা ঘটল এক সময়ে, যার মাত্র দুদিন আগে লেবাননের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন যে, দেশটি ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
হিজবুল্লাহ নিশ্চিত করেছে যে, ইসরায়েলি হামলায় সংগঠনের চিফ অব স্টাফ হাইসাম আলী তাবতাবাই গতকাল রোববার বৈরুতের হারেত হরেইক এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত পাঁচজনের একজন। এই হামলায় আরও ২৮ জন আহত হয়েছে।
হিজবুল্লাহ বলেছে, তাবতাবাই সংগঠনের সশস্ত্র শাখার শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ছিলেন। তিনি দক্ষিণ বৈরুতের দাহিয়েহর একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন। হারেত হরেইক এলাকায় এই অঞ্চলটি হিজবুল্লাহর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে জানায়, ‘মহান কমান্ডার’ তাবতাবাই ‘বৈরুতের দক্ষিণ উপশহরের হারেত হরেইক এলাকায় ইসরায়েলের বিশ্বাসঘাতক হামলায়’ নিহত হয়েছেন। তবে তার পদবি সেখানে উল্লেখ করা হয়নি।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা এই হামলায় তাবতাবাইকে ‘নিকেশ’ করেছে। এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছিল, তাবতাবাইই ছিল এই হামলার প্রধান লক্ষ্য। ইসরায়েলের গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত বছরের যুদ্ধের পর এটিই ছিল তাকে হত্যার তৃতীয় চেষ্টা।
হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ নেতা মাহমুদ ক্বমাতি বলেন, এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল ‘চূড়ান্ত রেখা’ অতিক্রম করেছে এবং সংগঠনটির নেতৃত্ব কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ উপশহরে আজকের এই হামলা পুরো লেবাননজুড়ে আরও বড় আকারের হামলার দুয়ার খুলে দিল।’
১৯৬৮ সালে বৈরুতে এক লেবানিজ মা এবং ইরানি বাবার ঘরে জন্ম নেওয়া তাবতাবাই দক্ষিণ লেবাননে বড় হন। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি হিজবুল্লাহতে যোগ দেন।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ২৮ জন আহত হয়েছে। লেবাননের সরকারি বার্তা সংস্থা এনএনএ জানিয়েছে, হারেত হরেইকের আল-আরিদ স্ট্রিটের অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। এতে আশপাশের ভবন ও গাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বৈরুত থেকে আল জাজিরার জেইনা খোদর জানিয়েছেন, লেবাননে উদ্বেগ বাড়ছে যে ইসরায়েল ‘যে দেশের আকাশে অবাধে হামলা চালাচ্ছে, তা আরও বাড়াতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘হিজবুল্লাহ কঠিন অবস্থায় রয়েছে। তাদের প্রতিরোধ সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিক্রিয়া না জানালে আরও হামলার ঝুঁকি থাকবে। আবার প্রতিক্রিয়া জানালে বড় ধরনের ইসরায়েলি হামলা হতে পারে, যা তাদের জনগোষ্ঠীর ওপরই চাপে পরিণত হবে।’
নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষক আলী রিযক আল–জাজিরাকে বলেন, এখন বড় প্রশ্ন হলো—হিজবুল্লাহ কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা, হিজবুল্লাহ নেতানিয়াহুকে সেই সুযোগ দিতে চাইবে না, অর্থাৎ এমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাইবে না যাতে নেতানিয়াহুর আরেকটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরুর অজুহাত তৈরি হয়। এটা নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অবস্থানকে সাহায্য করতে পারে এবং লেবাননের জন্য তা ভয়াবহ মূল্য বয়ে আনবে।’
লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হস্তক্ষেপ করে ইসরায়েলি হামলা থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন। রোববারের আগের বিবৃতিতে আউন বলেন, লেবানন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘দায়িত্বশীলভাবে, দৃঢ়ভাবে’ এগিয়ে এসে লেবানন ও তার জনগণের ওপর হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছে।
এর আগে ইসরায়েল এক বছর আগে বৈরুতের দক্ষিণাংশে হিজবুল্লাহর দীর্ঘদিনের নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে বিমান হামলায় হত্যা করেছিল। রোববারের এই হামলা ঘটল ঠিক কয়েক দিন আগে, যখন পোপ লিও চতুর্দশ লেবানন সফরে আসার কথা রয়েছে, আর ইসরায়েল সম্প্রতি তাদের আক্রমণ আরও জোরদার করেছে।
হিজবুল্লাহ সংসদ সদস্য আলী আম্মার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হওয়ার পরও গত এক বছরে ইসরায়েল পুরো লেবাননজুড়েই হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, ‘লেবাননের ওপর প্রতিটি হামলাই লাল রেখা অতিক্রমের শামিল। এই আগ্রাসন আমাদের মর্যাদা, সার্বভৌমত্ব এবং নাগরিকদের নিরাপত্তাকে লক্ষ্য করে পরিচালিত।’