২৩ মাস ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনে আরও একটি রক্তক্ষয়ী দিন দেখল গাজাবাসী। উপত্যকাজুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। কাতারি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার আইডিএফের বর্বরতায় গাজাজুড়ে ৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৪৪ জনই গাজা সিটির বাসিন্দা। এর মধ্যে ১৪ জন নিহত হয়েছে বিতর্কিত সংগঠন গাজা হিউম্যানিটিরিয়ান ফাউন্ডেশনের ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে।
আজ শুক্রবারও উপত্যকাজুড়ে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে আইডিএফ। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ভোর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে সাতজনই শিশু। আল-জাজিরা বলছে, উপত্যকাজুড়ে আবাসিক বাড়িঘর ও বাস্তুচ্যুতদের তাঁবুকে বানানো হচ্ছে হামলার লক্ষ্যবস্তু। সবচেয়ে করুণ অবস্থা উপত্যকার সবচেয়ে বড় নগরী গাজা সিটির।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গাজা সিটির দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকায় ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তুচ্যুতদের তাঁবুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন চারজন, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। আল-তালাতিনি স্ট্রিট এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে হামলায় নিহত হয়েছেন আরও দুজন। গাজা সিটির একেবারে কেন্দ্রে একটি আবাসিক ভবনে হামলায় আরও দুজন প্রাণ হারিয়েছেন। গাজা সিটির পশ্চিমে আরও একটি অস্থায়ী বসতিতে ইসরায়েলি হামলায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। রেমাল ও দারাজ এলাকায়ও ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরও দুজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিটি স্পটে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।
আল-জাজিরা বলছে, গাজা সিটির আবাসিক বাড়ি এবং শরণার্থী শিবিরগুলোতে হামলার মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। পুরো উপত্যকার শহুরে এলাকার ৪০ শতাংশই এখন তাদের দখলে বলে দাবি করছে তারা। ইসরায়েলি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফি দেফ্রিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আগামী দিনগুলোতে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান আরও বিস্তৃত হওয়ার পাশাপাশি আরও বহুগুণে বাড়বে মাত্রা।
এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ব একসময় গাজার মানুষের এই দুর্বিষহ জীবনকে স্বাভাবিকভাবে নিতে শুরু করবে বলে আশঙ্কা করছেন গাজার ফিলিস্তিনি এনজিও নেটওয়ার্কের পরিচালক আমজাদ শাওয়া। আল জাজিরা আরবিকে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর আক্রমণ শুরুর পর থেকে এখন আমরা সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমরা ভয় পাচ্ছি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হয়তো শিশুদের হত্যা ও অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্যের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে, আর এগুলো শুধু খবরের পরিসংখ্যান হিসেবেই থেকে যাবে।’