জেরুজালেমের ওল্ড সিটির প্রবেশদ্বারে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে হয়রানির শিকার হওয়াটা মোটামুটি ‘অভ্যাসে পরিণত’ হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে। বছরের পর বছর এ দৃশ্য দেখা যেত সেখানে। কিন্তু গত সপ্তাহে ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর দৃশ্যপটের অনেকটা পরিবর্তন ঘটেছে।
ওল্ড সিটিতে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা আল জাজিরাকে জানান, এখন প্রবেশপথটিতে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন তাঁরা। ব্যক্তিগত ফোন তল্লাশির পাশাপাশি শক্তি প্রয়োগও করে থাকে ইসরায়েলি বাহিনী। জিজ্ঞাসাবাদের নামে অশ্লীল কথাবার্তা ও অপমান করার প্রবণতা আগের তুলনায় বহুগুণে বেড়েছে।
সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন ফিলিস্তিনের তরুণেরা। কারণ হিসেবে তাঁরা জানান, ফিলিস্তিনি তরুণদের অধিকাংশই বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত থাকে। এগুলোতে ইসরায়েলবিরোধী প্রচুর তথ্য থাকে। ফলে পুরুষদের ওপর শারীরিকভাবে নির্যাতন করার প্রবণতা বেড়ে গেছে।
হামজা আফগানি (২৭) নামের ফিলিস্তিনি এক ট্যুর গাইড জানান, সম্প্রতি তিনিও শারীরিকভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। তাঁর পরিবারের নারী সদস্যদের উদ্দেশ করে অশ্লীল ও অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করেছিলেন ইসরায়েলি সেনারা। এর প্রতিবাদ করায় শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয় হামজাকে। তিনি বলেন, আগে কথা বলার সুযোগ ছিল। কিন্তু এখন তাঁরা (ইসরায়েলি বাহিনী) আপনাকে আক্রমণকারী তকমা দিতে পারে। ইসরায়েলি সেনারা জানে, ‘আমাদের (ফিলিস্তিনিদের) মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম। ফলে তাঁরা আমাদের নারীদের নিয়ে মন্দ কথা বা অভিশাপ দিয়ে পুরুষদের উসকে দিতে চান। এতে কেউ উত্তেজিত হলে তাঁকে গেট থেকে পুশব্যাক করাটা সহজ হয়।’
অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের বার্গার রেস্তোরাঁয় কাজ করেন শারি (২৪)। কাজ সেরে প্রায় প্রতিরাতেই তাঁকে ওল্ড সিটির বাসায় ফিরতে হয়। কিন্তু ফেরার সময়ের ভোগান্তি তাঁর কাছে রীতিমতো ভীতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শারি বলেন, সেনারা এখন যা মনে চায় তা-ই বলেন। কখনো তাঁরা জোরে চিৎকার করেন। পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেন। জবাবে কিছু বললেই আপনাকে নিয়ে সোজা থানায় চলে যাবেন তাঁরা।
শারি আরও বলেন, হামাসের হামলার আগে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়মিত হয়রানি তবুও সহনীয় ছিল। এবার যা হচ্ছে তা একেবারেই অসহনীয়।
১৯৮০ সালে ‘জেরুজালেম আইন’ পাস করার মাধ্যমে গোটা শহরকে ‘রাজধানী’ ঘোষণা করে ইসরায়েল; যার অর্থ হলো পূর্ব জেরুজালেম আনুষ্ঠানিকভাবে অধিকৃত।