হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

বাড়ি নেই, তবু ফিরছে গাজার মানুষ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

ফাইল ছবি

টানা দুই বছরের নিরবচ্ছিন্ন যুদ্ধের পর অবশেষে গাজায় নেমেছে একটুখানি শান্তি। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতি স্থানীয় সময় শুক্রবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে কার্যকর হতেই দক্ষিণ গাজার শরণার্থীশিবিরগুলো থেকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি উত্তরমুখী যাত্রা শুরু করেছেন। উপকূলীয় সড়ক ধরে পায়ে হেঁটে তারা ফিরছেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত নিজেদের বাড়ির দিকে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গার্ডিয়ান জানিয়েছে, নতুন সমঝোতা অনুযায়ী ইসরায়েলি বাহিনী শুক্রবার সকালেই কিছু এলাকা থেকে সরে যায়। অন্যদিকে হামাস আগামী সপ্তাহের শুরুতে তাদের হাতে থাকা ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে বলে জানানো হয়েছে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল ২৫০ জন দীর্ঘ মেয়াদি সাজাপ্রাপ্ত ও আরও প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন যুদ্ধকালীন আটক ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে।

এই বন্দী বিনিময় চুক্তি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত এক নতুন ‘শান্তি পরিকল্পনার’ প্রথম ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে—যা দুই বছরের এই সংঘাতের অবসানে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমাদের সামরিক ও কূটনৈতিক চাপের ফলেই জিম্মিদের মুক্তি সম্ভব হয়েছে। ইসরায়েলের নিরাপত্তাই ছিল আমার একমাত্র বিবেচনা।’ তিনি ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘যদি সহজ পথে হামাস নিরস্ত্র হয়, ভালো। না হলে কঠিন পথেই আমরা তা নিশ্চিত করব।’

যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনী গাজার খান ইউনুস ও নুসাইরাতের মতো এলাকায় অবস্থান নিয়েছিল এবং সকাল পর্যন্তও বিমান হামলা চলছিল। তবে মধ্যাহ্নে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতেই সেনারা পিছু হটতে শুরু করে।

এরপরই হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গাজা সিটির পথে রওনা দেন। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ গাজা উত্তর অংশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এখন তাঁরা ফিরছেন নিজেদের বাড়ি ফিরছেন। তবে তাঁদের বেশির ভাগের বাড়িই আর অবশিষ্ট নেই। অনেকে হাঁটছেন, অনেকে সাইকেল ঠেলছেন।

ফিরতি পথে আসা আসমা জুহায়ের নামে এক নারী বলেন, ‘একজনকে দেখলাম দূর থেকে নিজের বাড়ি এখনো দাঁড়িয়ে দেখে দৌড়ে গিয়ে আনন্দে চিৎকার করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানতাম, আমার ঘরটা আর নেই—এই ভেবেই বুক ফেটে যাচ্ছিল।’

খান ইউনুসে আহমেদ আল-ব্রিম বলেন, ‘আমাদের এলাকা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন। কোথায় যাব এখন জানি না।’ অপর এক বাসিন্দা মুহান্নাদ আল-শাওয়াফ বলেন, ‘তিন মিনিটের পথ এখন এক ঘণ্টা লাগে। ধ্বংস এত ভয়াবহ যে ভাষায় বোঝানো যায় না।’

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ৯০ শতাংশের বেশি বাড়িঘর ও অবকাঠামো ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় পুরো জনগোষ্ঠীই একাধিকবার স্থানচ্যুত। খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকটে বহু এলাকায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েল প্রতিদিন প্রায় ৬০০ ট্রাক মানবিক সহায়তা ঢুকতে দেবে বলে জানিয়েছে। তবে জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা বলছে, এই পরিমাণটি অনেক কম। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, তারা এখনো জানে না, কীভাবে গাজায় সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হবে।

এদিকে যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গাজার প্রায় ৬৭ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে—যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। যুদ্ধবিরতির এই সময়টিতে চিকিৎসাকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা লাশ উদ্ধারের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করেছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক আক্রমণে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হয়েছিলেন। সেই ঘটনার প্রতিশোধেই ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ অভিযান শুরু করেছিল।

যুদ্ধবিরতির ফলে উভয় পক্ষেই স্বস্তির নিশ্বাস পড়েছে, তবু অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। ট্রাম্পের ঘোষিত ২০ দফা পরিকল্পনায় হামাসকে নিরস্ত্র করা, আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠন ও নতুন প্রশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে—যা বাস্তবায়ন করা সহজ হবে না বলেই মনে করছেন সবাই।

তবে এত কিছুর পরও গাজার ধ্বংসস্তূপে ফিরে আসা মানুষের চোখে একটুখানি আশার ঝলক দেখা গেছে—বাড়ি না থাকুক, বেঁচে থাকা তো যাবে।

ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে প্রতিরক্ষা জোট শক্তিশালী করছে গ্রিস ও সাইপ্রাস

যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ইউরোপের সঙ্গে ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে’ আছে ইরান: পেজেশকিয়ান

নামাজরত ফিলিস্তিনির ওপর গাড়ি চালিয়ে দিলেন ইসরায়েলি সেনা

গাজায় ধ্বংসস্তূপের মাঝেই বড়দিনের আনন্দ খুঁজছে ক্ষুদ্র খ্রিষ্টান সম্প্রদায়

শানলিউরফা: নবীদের যে নগরে মিলেছে তিন ধর্মের মানুষ

৭ অক্টোবরের দায় এড়াতে ফন্দি খোঁজার দায়িত্ব দিয়েছিলেন নেতানিয়াহু: সাবেক মুখপাত্র

মসজিদে নববির মুয়াজ্জিন শেখ ফয়সাল নোমান আর নেই

ইসরায়েল আর ‘কখনোই গাজা ত্যাগ করবে না’

তুরস্কে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে লিবিয়ার ‘জাতীয় ঐক্যের সরকারের’ সেনাপ্রধান নিহত

গাজায় ৭৩ দিনে ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ডের শিকার ৪১১ ফিলিস্তিনি, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন ৮৭৫ বার