ইসরায়েলি হামলায় গাজায় মারাত্মকভাবে পুড়ে যাওয়া আহতের সংখ্যা তিন হাজার তিন শোর বেশি। এদের মধ্যে ৯ বছরের শিশু এলহাম আবু হাজ্জাজ অন্যতম। যুদ্ধে বাবা-মা দুজনকেই হারিয়ে, তৃতীয়-ডিগ্রির দগদগে পোড়া নিয়ে নতুন করে জীবন গড়ার চেষ্টা করছে সে।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, এলহামের শেষ স্মৃতি যতটুকু মনে পড়ে—তার মা তাকে জড়িয়ে ধরে প্রার্থনা করছিলেন। তারপর জ্ঞান ফিরতেই এলহাম দেখে, সে হাসপাতালে। পেটের ওপর একটি যন্ত্র বসানো, পুরো শরীর কাঁপছে। নিজের শরীর ছুঁয়েই সে বুঝল, সারা শরীরে গভীর ক্ষত। ডাক্তারকে সে বাবা-মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলেও কোনো উত্তর মেলেনি।
নিজের গলা, হাত, পা—সব জায়গার ক্ষত দেখে এলহাম এতটাই হতবাক হয় যে, আয়নায় তাকিয়ে সে বলে—‘হায় আল্লাহ, এই ক্ষতগুলো কত বিশ্রী!’
কিন্তু সবচেয়ে কঠিন ছিল তার বাবা-মা আর নেই—এই সত্যটি মেনে নেওয়া। তার নানি তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান এবং তাকে জানান—তার বাবা-মা এখন জান্নাতে আছে। তখনই এলহাম বুঝল—বাবা-মা সত্যিই আর বেঁচে নেই। সে কান্নায় ভেঙে পড়ল।
বর্তমানে এলহাম দাদা-দাদি, খালা ও সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া ভাইয়ের সঙ্গে থাকে। ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়েই সে জানিয়েছে, ভাইকে জীবিত দেখে তার মনে কিছুটা আনন্দ এসেছিল। পরিবারকে পাশে পেলেও মনের গভীরে বাবা-মাকে হারানোর দুঃখ এখনো রয়ে গেছে।
ছোট্ট এই মেয়েটি এখন চেষ্টা করছে জীবনের দিকে ফিরে তাকাতে। সে আঁকা-আঁকিতে আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে। জানিয়েছে, আঁকা আঁকি করার সময় তার আগের কথা আর মনে পড়ে না।
শেষ যে ছবিটি এলহাম এঁকেছে—সেটি তার ভেঙেচুরে যাওয়া বাড়ির। তবে ছবিতে সে বাড়িটিকে নতুন করে গড়ে তুলেছে। এঁকেছে একটি দোলনা, একটি গাছ—যে গাছটি তার বাবা একদিন রোপণ করেছিলেন।
যুদ্ধের আগুনে পোড়া শরীর নিয়ে এলহাম আজ নতুন স্বপ্ন আঁকছে—তার হারানো জীবন পুনর্নির্মাণের স্বপ্ন।
গাজার আল-সাফাওয়া এলাকায় ইসরায়েলি আক্রমণে মারা যান এলহামের বাবা ও মা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৪২ হাজার মানুষ এমনভাবে আহত হয়েছেন যে, তাঁদের জীবন পুরোপুরি বদলে গেছে। আহত এসব মানুষের এক-চতুর্থাংশই শিশু। এর মধ্যে ৩ হাজার ৩৫০ জনের শরীরে মারাত্মকভাবে পুড়ে গেছে। তবে পুড়ে যাওয়া রোগীদের ৭০ শতাংশই শিশু এবং বেশির ভাগের বয়সই পাঁচ বছরের নিচে।
ফিলিস্তিনি পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত গাজার ৩৯ হাজারেরও বেশি শিশু বাবা-মা হারিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার শিশু পুরোপুরি অনাথ হয়েছে।