হোম > বিশ্ব > লাতিন আমেরিকা

পাইলটকে প্রলুব্ধ করে মাদুরোকে ধরার মার্কিন গুপ্ত অভিযান ফাঁস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

বিমানের ভেতর ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। ছবি: দ্য ইনডিপেনডেন্ট

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ধরিয়ে দিতে তাঁর ব্যক্তিগত পাইলটকে প্রলুব্ধ করার এক রুদ্ধশ্বাস গুপ্ত অভিযানের খবর ফাঁস হয়েছে। এই অভিযানকে কোনো শীতল যুদ্ধের একটি থ্রিলার গল্পের সঙ্গে তুলনা করেছে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট। অভিযানটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মার্কিন ফেডারেল এজেন্ট এডউইন লোপেজ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনস (এইচএসআই) এর কর্মকর্তা ছিলেন।

ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই মাসেই ডোমিনিকান রিপাবলিকের মার্কিন দূতাবাসে এক তথ্যদাতা হাজির হন। তিনি দাবি করেন, মাদুরোর ব্যবহৃত দুটি বিলাসবহুল জেট বিমান মেরামতের কাজ চলছে সান্তো ডোমিংগোর লা ইসাবেলা বিমানবন্দরে।

ওই দূতাবাসেই তখন কর্মরত ছিলেন ৫০ বছর বয়সী লোপেজ—একজন অভিজ্ঞ প্রাক্তন মার্কিন সেনা রেঞ্জার, যিনি বহু বছর ধরে মাদক ও অর্থ পাচার চক্র ধ্বংসে সুনাম কুড়িয়েছিলেন। আগন্তুকের দেওয়া তথ্য লোপেজের কৌতূহল জাগিয়েছিল। কারণ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ভেনেজুয়েলার এসব বিমানের যন্ত্রাংশ কেনা বা মেরামত করাই বেআইনি।

বিমান দুটি শনাক্ত করতে সময় লাগেনি। এর একটি ‘দাসো ফ্যালকন ২০০০ ইএক্স’ এবং অন্যটি ‘ফ্যালকন ৯০০ ইএক্স’। পরে জানা যায়, মাদুরো পাঁচজন পাইলটকে পাঠিয়েছেন বিমানগুলো ফেরত নিতে। এখানেই লোপেজের মাথায় আসে এক সাহসী চিন্তা। তিনি মাদুরোর প্রধান পাইলটকে রাজি করানোর কথা ভাবলেন, যাতে ওই পাইলট প্রেসিডেন্টকে বহন করার সময় কোনো বিমানকে এমন কোনো জায়গায় অবতরণ করান, যেখানে মার্কিন বাহিনী মাদুরোকে গ্রেপ্তার করতে পারে?

এই ভাবনা থেকেই শুরু হয় এক গুপ্তচর নাটক। ডোমিনিকান কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে লোপেজ ও তাঁর দল পাইলটদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। তাঁদের মূল টার্গেটে ছিলেন ভেনেজুয়েলার বিমানবাহিনীর কর্নেল ও মাদুরোর ব্যক্তিগত পাইলট—বিটনার ভিলেগাস। ভিলেগাস ছিলেন প্রেসিডেনশিয়াল অনার গার্ডের সদস্য, শান্ত স্বভাবের কিন্তু মাদুরোর আস্থাভাজন।

ভিলেগাসকে লোপেজ ডেকে নেন একান্ত সাক্ষাতে। কথোপকথনের একপর্যায়ে তিনি সরাসরি প্রস্তাব দেন—‘যদি আপনি গোপনে মাদুরোকে এমন কোথাও নিয়ে যান, যেখানে আমরা তাঁকে আটকাতে পারি, তাহলে আপনি হবেন ধনী ও জাতির নায়ক।’

ভিলেগাস অবশ্য এই প্রস্তাবের বিপরীতে কিছু বলেননি। তবে বিদায়ের আগে নিজের মোবাইল নম্বর দেন, যা লোপেজের মনে আশা জাগিয়েছিল।

এরপর ১৬ মাস ধরে লোপেজ গোপনে ভিলেগাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তাঁরা এনক্রিপটেড অ্যাপে কথা বলেন, বার্তা পাঠান, এমনকি অবসরে যাওয়ার পরও লোপেজ তাঁর প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। কিন্তু ওই পাইলটের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র একে একে মাদুরোর দুটি বিমান জব্দ করে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমটি এবং ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয়টি বাজেয়াপ্ত হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ডোমিনিকান রিপাবলিক সফরে গিয়ে প্রকাশ্যে বলেন, ‘এই বিমানে ভেনেজুয়েলার সামরিক গোপন তথ্যের ভান্ডার রয়েছে।’ এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় মাদুরোর সরকার এবং ‘নির্লজ্জ চুরির’ অভিযোগ করে।

লোপেজ তখনো থামেননি। তিনি ভিলেগাসকে রাজি করানোর চেষ্টা চালিয়ে যান। গত আগস্টে তিনি ওই পাইলটকে বার্তা পাঠান—‘তোমার উত্তর এখনো পাইনি।’ এই বার্তার সঙ্গে তিনি একটি সরকারি বিবৃতিও জুড়ে দেন, যেখানে মাদুরোকে ধরিয়ে দিলে ৫ কোটি ডলার পুরস্কারের ঘোষণা করা হয়। লোপেজ লেখেন, ‘এখনো সময় আছে নায়ক হওয়ার।’

কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে গত মাসের (সেপ্টেম্বর) মাঝামাঝিতে তিনি তাঁর শেষ চেষ্টা করেন। সে সময় একদিন সংবাদে মাদুরোর বিমানকে আকাশে অদ্ভুত এক ঘুরপথে উড়তে দেখে লোপেজ ওই পাইলটকে বার্তা পাঠান—‘কোথায় যাচ্ছ?’ উত্তরে ভিলেগাস জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কে?’ লোপেজ পরিচয় দিলে পাইলট ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘আমরা ভেনেজুয়েলীয়রা বিশ্বাসঘাতক নই।’

তখন লোপেজ তাঁকে তাঁদের আগের সাক্ষাতের একটি ছবি পাঠান। ভিলেগাস বিস্মিত হয়ে লেখেন, ‘তুমি পাগল নাকি?’

লোপেজ জবাব দেন—‘হয়তো একটু।’ এরপর তিনি শেষবারের মতো লেখেন—‘তোমার সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নাও। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে।’ ভিলেগাস অবশ্য এরপরই লোপেজের নম্বরটি ব্লক করে দেন।

পাইলটকে রাজি করাতে না পেরে মার্কিন এজেন্ট ও মাদুরো-বিরোধী গোষ্ঠী অন্য কৌশল নেয়। প্রেসিডেন্ট মাদুরোকেই বিভ্রান্ত করতে চান তাঁরা। এ ক্ষেত্রে ভিলেগাসের জন্মদিনে সাবেক মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তা মার্শাল বিলিংসলি টুইটারে ব্যঙ্গাত্মক শুভেচ্ছা জানান এবং ভিলেগাসের দুটি ছবি পোস্ট করেন। এর মধ্যে একটি ছবিতে দেখা যায়—লোপেজের সঙ্গে ভিলেগাসের পুরোনো সাক্ষাতের মুহূর্ত।

এই টুইট বার্তাটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে পড়ে। ভেনেজুয়েলায় গুজব ছড়ায়—পাইলটকে নাকি জেরা করা হচ্ছে কিংবা আটক করা হয়েছে। এই ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই ভেনেজুয়েলার টেলিভিশনে হাজির হন ভিলেগাস। তাঁর পাশে ছিলেন তখন দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী দিয়োসদাদো কাবেলো। কাবেলো হাসতে হাসতে বলেন, ‘আমাদের সৈনিকেরা বিক্রি হয় না।’ পাইলট ভিলেগাস চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন, মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচু করে মাদুরোর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন।

লোপেজের দুঃসাহসী এই পরিকল্পনা রয়ে গেছে ইতিহাসের আড়ালে এক অসম্পূর্ণ অধ্যায় হিসেবে।

খড়্গহস্ত ট্রাম্প: মাদুরোর পাশে থাকবেন পুতিন ও লুকাশেঙ্কো

ভেনেজুয়েলার তেলের ট্যাংকার মেরে দেওয়ার ঘোষণায় ট্রাম্পকে ‘জলদস্যু’ বলল কারাকাস

হন্ডুরাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: এগিয়ে মধ্যপন্থী নাসরাল্লা, ট্রাম্প তুলেছেন কারচুপির অভিযোগ

ক্যারিবীয় সাগরে নৌকায় হামলা, কলম্বিয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিহতের পরিবারের পিটিশন দাখিল

আরও দুই মিত্র হারালেন মাদুরো, লাতিনে ভেনেজুয়েলার পাশে এখন কারা

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনায় ৬টি এয়ারলাইন নিষিদ্ধ করল ভেনেজুয়েলা

সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি যুক্তরাষ্ট্রের—তলোয়ার হাতে ভাষণ দিলেন মাদুরো

গৃহবন্দী থেকে কারাগারে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো

আন্দিজ পর্বতমালায় হাজারো গর্তের রহস্য উন্মোচনের দাবি বিজ্ঞানীদের

মেক্সিকোতে জেন-জি বিক্ষোভ, পুলিশের বলপ্রয়োগ