ইতালির মধ্যাঞ্চলে একটি প্রত্যন্ত বনে অফ-গ্রিড বা সম্পূর্ণ স্বনির্ভর জীবনযাপন করছিল পাঁচ সদস্যের একটি পরিবার। এই পরিবারে তিন শিশু ছাড়াও তাদের বাবা-মা ছিলেন। কিন্তু পরিবারটির কথিত সেই ‘আদর্শ জীবন’ হঠাৎ থমকে গেছে আদালতের হস্তক্ষেপে।
রোববার (২৩ নভেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশে ওই পরিবারের তিন শিশুকে সরিয়ে এনে একটি গির্জা-পরিচালিত আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে তাদের বাবা-মায়ের দেখা করার সুযোগও সীমিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবারটির আইনজীবী।
ইতালিতে এই ঘটনা ‘বিম্বি নেল বোস্কো’ বা ‘বনের শিশু’ হিসেবে ইতিমধ্যে আলোড়ন তুলেছে। তিন শিশুকে তাদের পরিবার তথা বাবা-মায়ের কাছে ফেরত দেওয়ার দাবিতে হাজারো মানুষ অনলাইনে একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন।
শিশুদের বাবা ৫১ বছর বয়সী ব্রিটিশ নাগরিক নাথান ট্রেভ্যালিওন পেশায় ছিলেন শেফ। তাঁর সঙ্গী ৪৫ বছর বয়সী অস্ট্রেলীয় ক্যাথরিন বার্মিংহাম একজন অশ্বারোহন প্রশিক্ষক ছিলেন। আদালতের নথি অনুযায়ী, তাঁদের সন্তানদের মধ্যে একজন আট বছরের এবং বাকি দুজন ছয় বছর বয়সী যমজ।
আদালতের আদেশে বলা হয়েছে—পরিবারটি বসবাস অনুপযোগী একটি ভবনে বসবাস করছে। তাদের কোনো স্থায়ী আয় নেই, সামাজিক যোগাযোগ নেই, বাড়িতে শৌচাগারও নেই, আর শিশুরা স্কুলে যায় না। এসব মিলিয়ে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এই অভিযোগেই বাবা-মায়ের অভিভাবকত্ব স্থগিত করা হয়।
আইনজীবী জিওভান্নি আঙ্গেলুচ্চি জানিয়েছেন, পরিবারটি আগুন জ্বালিয়ে ঘর গরম রাখে এবং সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে আলো পায় ও ডিভাইসে চার্জ দেয়। তারা মাইক্রোপ্লাস্টিক এড়াতে এবং ব্যয় কমাতে পানির লাইন খুলে ফেলেছে। এর বদলে কূপের পানি ব্যবহার করছে। ঘরের ভেতরে টয়লেট নেই, বাইরে কম্পোস্টিং টয়লেট ব্যবহার করছে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই পরিবারের পাঁচজনই বনে পাওয়া বন্য মাশরুম খেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিল। এরপর থেকেই সামাজিক সেবা বিভাগ তাদের ওপর নজরদারি শুরু করে। শিশুদের নিয়মিত চিকিৎসা ও স্কুলে পাঠানোর সুপারিশ জানানো হলেও পরিবারটি তা মানেনি বলে অভিযোগ।
এদিকে শিশুদের বাবা ট্রেভ্যালিওন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘শিশুরা সুখেই ছিল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ভদ্র আর সুস্থ ছিল—তাহলে এই বন্ধন ভাঙা হচ্ছে কেন?’
ঘটনাটি ইতালির রাজনীতিতেও প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি আদালতের সিদ্ধান্তকে ‘উদ্বেগজনক’ বলেছেন এবং ন্যায়মন্ত্রীকে বিষয়টি দেখতে বলেছেন। উপপ্রধানমন্ত্রী ম্যাত্তেও সালভিনি এটিকে ‘লজ্জাজনক’ আখ্যা দিয়ে পরের সপ্তাহে পরিবারটির সেই বাড়িটি পরিদর্শনের ঘোষণা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, পরিবারটি ২০২১ সালে বনাঞ্চলের ওই বাড়িটি কিনেছিল। স্থানীয় মেয়র জিউসেপে মাসচিউল্লি বলছেন, কিছু শর্ত যেমন—পানির লাইন পুনঃস্থাপন এবং শিশুদের শিক্ষার অগ্রগতি নিয়ে স্কুলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের বিষয়গুলো মেনে চললে সমস্যার সমাধান সম্ভব।