ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা ‘বিশ্বস্ত নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ তৈরির লক্ষ্যে আলোচনা করেছেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন থামাতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই বৈঠক হয়। ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মস্কো সফরের আগেই আয়োজন করা হলো।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল রোববার ফ্লোরিডায় ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের প্রধান রুস্তেম উমেরভের নেতৃত্বে গঠিত ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, আলোচনা ছিল ‘গঠনমূলক।’ তবে তার ভাষায়, এখনো ‘অনেক কাজ বাকি।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টা সংবেদনশীল। জটিলও বটে।’
বৈঠকে উইটকফ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারও ছিলেন। আলোচনার আগেই রুবিও বলেছিলেন, এই উদ্যোগের লক্ষ্য ইউক্রেনকে ‘একটি স্বাধীনতার পথে’ নিয়ে যাওয়া।
বৈঠকের পর রুবিও জানান, আলোচনায় ‘অনেক চলমান অংশ’ রয়েছে এবং ‘অবশ্যই, আরও একটি পক্ষ (রাশিয়া) আছে, যাদের এই সমীকরণের অংশ হতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন স্তরে রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে এবং ‘তাদের অবস্থানও ভালোভাবেই বোঝা হয়েছে।’
উমেরভ আলোচনাকে ‘গঠনমূলক’ বলে উল্লেখ করেন। এর আগে এক্সে লিখেছিলেন, ‘আমাদের নির্দেশনা ও অগ্রাধিকার স্পষ্ট—ইউক্রেনের স্বার্থ রক্ষা, অর্থবহ সংলাপ নিশ্চিত করা এবং জেনেভায় অর্জিত অগ্রগতির ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়া।’ তিনি যোগ করেন, আলোচকরা চান ইউক্রেনের জন্য ‘বাস্তব শান্তি ও দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ নিশ্চিত করতে।
গত সপ্তাহে জেনেভায় হওয়া আলোচনার পরই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো, যেখানে রুবিও ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিরা ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা সংশোধন করেন। প্রথম খসড়াটি রাশিয়ার প্রত্যাশার তালিকা হিসেবে সমালোচিত হয়েছিল।
এই বৈঠকই উইটকফের রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাপের মঞ্চ তৈরি করেছে। ট্রাম্প আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সেই বৈঠক এ সপ্তাহেই হতে পারে।
পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাব, যা এখনো প্রকাশ করা হয়নি, ‘ভবিষ্যৎ চুক্তির ভিত্তি”)’ হতে পারে। তিনি আরও জানান, উইটকফের সঙ্গে আলোচনায় দোনবাস ও ক্রিমিয়া অঞ্চলের বিষয়গুলোই প্রধান হবে।
রুবিও বলেন, ‘এটা শুধু যুদ্ধ থামানোর ব্যাপার নয়। এমন এক পথ খুঁজে বের করা যাতে ইউক্রেন স্বাধীন ও সার্বভৌম থাকতে পারে, আবার যেন এ ধরনের যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি না ঘটে। নিজের জনগণের জন্য সমৃদ্ধির যুগ শুরু করতে পারে, দেশ পুনর্নির্মাণ তো আছেই।’
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প্রথম উপমন্ত্রী সের্হি কিসলিতসিয়া এক্সে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের আলোচনার শুরুটা ‘ভালো’ হয়েছে এবং এসব আলোচনা ‘উষ্ণ পরিবেশে’ এগোচ্ছে, যা ইতিবাচক ফলাফল এনে দিতে পারে।
এদিকে, এই সংবেদনশীল সময়ে রাশিয়ার বাহিনীর অগ্রযাত্রার মধ্যে ইউক্রেন এখন সূক্ষ্ম ভারসাম্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে। একই সঙ্গে দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে কেঁপে উঠছে জেলেনস্কির প্রশাসন। এ সপ্তাহেই তাঁর চিফ অব স্টাফ আন্দ্রে ইয়ারমাক পদত্যাগ করেছেন।
জেনেভায় গত সপ্তাহে রুবিওর সঙ্গে আলোচনায় ইয়েরমাকই ট্রাম্পের ২৮ দফা পরিকল্পনায় সংশোধনী আনেন। প্রথম খসড়ায় ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দোনবাস পুরোপুরি রাশিয়াকে দিয়ে দেওয়া, সামরিক বাহিনীর আকার কমানো এবং ন্যাটো সদস্যপদ নেওয়ার আশা ত্যাগ করার প্রস্তাব ছিল।
তীব্র সমালোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র পরিকল্পনাটি ১৯ দফায় নামিয়ে আনে। তবে নতুন খসড়ার বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি।
জেলেনস্কি এক্সে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘গঠনমূলক মনোভাব’ দেখাচ্ছে। তাঁর ভাষায়, ‘আগামী কয়েক দিনে মর্যাদাপূর্ণভাবে যুদ্ধ শেষ করার রূপরেখা তৈরি করা সম্ভব হতে পারে।’
রোববার তিনি জানান, তিনি ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটের সঙ্গে কথা বলেছেন। জেলেনস্কির মন্তব্য, ‘গুরুত্বপূর্ণ দিন চলছে এবং অনেক কিছুই বদলে যেতে পারে।’ এছাড়া, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে সোমবার প্যারিসে জেলেনস্কির বৈঠক হবে বলে জানিয়েছে ফরাসি প্রেসিডেন্সি।
এদিকে রাশিয়া রণক্ষেত্রে চাপে বাড়াচ্ছে। আলোচনার আগের দুই রাত ইউক্রেনের রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। শনিবার রাতে রুশ হামলায় মারা যায় ছয়জন। আহত হয় আরও কয়েক ডজন। কিয়েভের চার লাখ পরিবারের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
কিয়েভের উপকণ্ঠে ড্রোন হামলায় মারা যায় একজন। আহত হয় ১১ জন।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে ইউক্রেনীয় এক নিরাপত্তা সূত্র জানায়, কৃষ্ণসাগরে রুশ তেল বহনকারী দুটো ট্যাংকারে হামলার পেছনে কিয়েভের হাত রয়েছে। সেগুলো নাকচ করা রুশ তেল গোপনে পরিবহন করছিল বলে ইউক্রেনের ধারণা।