অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ভয়াবহ হামলার সময় এক হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচানো আহমেদ আল-আহমেদ এখন ‘নায়ক’ বনে গেছেন। শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, পুরো বিশ্বজুড়ে তাঁর প্রতি সহমর্মিতা ও কৃতজ্ঞতার ঢল নেমেছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর জন্য গঠিত তহবিলে অনুদানের পরিমাণ একদিনেই ১১ লাখ অস্ট্রেলীয় ডলার (প্রায় ৭ লাখ ৪৪ হাজার মার্কিন ডলার) ছাড়িয়ে গেছে।
৪৩ বছর বয়সী আহমেদ আল আহমেদ দুই সন্তানের বাবা। ঘটনার সময় তিনি পার্ক করা একটি গাড়ির আড়ালে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে সুযোগ বুঝে পেছন দিক থেকে এক বন্দুকধারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং তার রাইফেল কেড়ে নিয়ে তাকে মাটিতে ফেলে দেন।
ধস্তাধস্তির ওই মুহূর্তটিতে দ্বিতীয় এক হামলাকারীর গুলিতে আহমেদ নিজেও আহত হন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ জানান, আহমেদ দুবার গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর পরিবার জানিয়েছে, গুলি তাঁর হাত ও বাহুতে লেগেছে এবং অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী অ্যালবানিজ এবিসি নিউজকে বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় আমরা মানবতার সবচেয়ে অন্ধকার দিক দেখেছি একটি সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে। কিন্তু একই সঙ্গে দেখেছি মানবতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ—আহমেদ আল আহমেদ নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে বিপদের দিকে ছুটে গেছেন এবং মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন।’
আহমেদের বাবা মোহাম্মদ ফাতেহ আল আহমেদ বলেন, তাঁর ছেলে একজন নায়ক। তিনি আগে পুলিশের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং মানুষের নিরাপত্তা রক্ষার প্রবল মানসিকতা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় মানুষকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তার বিবেকই তাকে সন্ত্রাসীর ওপর পাল্টা আঘাত করতে বাধ্য করেছে।’
নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্স হাসপাতালে গিয়ে আহমেদের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘আহমেদ একজন বাস্তব জীবনের নায়ক।’
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা আহমেদের একটি ছবি প্রকাশ করা হয়, যেখানে তাঁর বাম হাত প্লাস্টারে বাঁধা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও আহমেদের সাহসিকতার প্রশংসা করে তাঁকে ‘অত্যন্ত সাহসী মানুষ’ বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে আহমেদের চিকিৎসা ব্যয় মেটানো ও তাঁকে সহযোগিতার জন্য ‘গোফান্ডমি’-তে খোলা একটি স্বপ্রণোদিত তহবিলে একদিনেই ১১ লাখ অস্ট্রেলীয় ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৯ কোটি টাকা) ছাড়িয়ে গেছে। এই তহবিলে মার্কিন ধনকুবের বিল অ্যাকম্যান একাই ৯৯ হাজার ৯৯৯ মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছেন।
হাসপাতালের বাইরে সাধারণ মানুষ ফুল নিয়ে এসে আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন। অনেকেই বলছেন, এই সাহস শুধু বন্ডাই বিচের নয়—এটি সমগ্র মানবতার।
রোববার বিকেলে (১৪ ডিসেম্বর) একটি ইহুদি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এই হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হন। অস্ট্রেলীয় পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারী ছিল ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ও তাঁর ২৪ বছর বয়সী ছেলে। এটি প্রায় তিন দশকের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ গুলিবর্ষণের ঘটনা।