হংকংয়ের তাই পো এলাকার ওয়াং ফুক কোর্ট আবাসিক কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৬৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং নিখোঁজ রয়েছে আরও শতাধিক। বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে লাগা এই আগুন খুব দ্রুত পাশাপাশি কয়েকটি সুউচ্চ ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ধোঁয়া আর আগুনে মোড়া ওই বিকেলে ভবনগুলোর ভেতরে সৃষ্টি হয় চরম আতঙ্ক, বিশৃঙ্খলা ও মৃত্যুভয়ের মুহূর্ত।
ওই আবাসনের শার্লি চ্যান নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘একটি ঘর—মুহূর্তে সব পুড়ে ছাই। এটা কল্পনাতীত, হৃদয় ভেঙে যায়। কীভাবে কথায় প্রকাশ করব, বুঝতে পারছি না।’
৬৫ বছর বয়সী ইউয়েন, যিনি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ওই এলাকায় থাকেন। তিনি জানান, ভবনগুলোতে অধিকাংশই প্রবীণ মানুষ থাকায় তাঁরা দ্রুত নেমে আসতে পারেননি। আর সংস্কার কাজের জন্য প্রায় সব জানালাই ছিল বন্ধ। অনেকে বুঝতেই পারেননি আগুন লেগেছে। প্রতিবেশীরা ডেকে নিয়ে গেছে তাদের।
৭৪ বছর বয়সী টং পিংমুন থাকতেন ১ নম্বর ব্লকেই। তিনি প্রথমে শুধু ধোঁয়ার গন্ধ পেয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর দমকলকর্মীরা দরজায় কড়া নাড়ে এবং তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে দ্রুত বেরিয়ে যেতে বলে। কিন্তু টং ধারণাই করেননি, আগুন তাঁর ফ্ল্যাট পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। তবে দ্রুত পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করেছিল। একপর্যায়ে ঘন ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসায় তিনি ও তাঁর স্ত্রী বাথরুমে আশ্রয় নেন, ভেজা তোয়ালে দিয়ে দরজার ফাঁকগুলো বন্ধ করেন, ভেন্টিলেশন চালু করেন এবং সাহায্য চান। অবশেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে উদ্ধারকারীরা সেখানে পৌঁছায়।
টং বলেন, ‘ঘোর অন্ধকার ছিল। নিজেরা বের হতে গেলে বাঁচতাম না।’
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকলকর্মীদের চরম উত্তাপের মুখোমুখি হতে হয়। হংকং ফায়ার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্টের উপপরিচালক ডেরিক আর্মস্ট্রং চ্যান বলেন, ‘ভবনের ভেতরের তাপমাত্রা এত বেশি যে, ভেতরে প্রবেশ ও উদ্ধার অভিযান চালানো অত্যন্ত কঠিন।’
রাতভর স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরাও সহায়তায় ছিলেন। তাঁদের একজন ২৯ বছর বয়সী লোগান ইয়ুং বলেন, নির্মাণজনিত ত্রুটিই এই বিপর্যয়কে আরও বড় করেছে।
দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে শুরু হওয়া এই আগুন আটটি টাওয়ার ও প্রায় ২ হাজার ফ্ল্যাটের কমপ্লেক্স জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ভবনগুলোতে সংস্কার কাজ চলছিল এবং চারপাশ ঘেরা ছিল ঐতিহ্যবাহী বাঁশের নির্মাণ অবকাঠামো দিয়ে। এগুলো দাহ্য হওয়ায় আগুন ছড়াতে বড় ভূমিকা রেখেছে। জানা গেছে, বাঁশের কাঠামো দ্রুত আগুন বাড়িয়ে দিতে পারে—এমন সতর্কতা অগ্নিকাণ্ডের আগে থেকেই ছিল।
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কাজের সাইটে দাহ্য পদার্থ অবহেলায় ফেলে রাখায় আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর দিনভর তল্লাশি শেষে ৬৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন ৩৭ বছর বয়সী দমকলকর্মীও রয়েছেন। আবাসন এলাকাটির ৯০০–এর বেশি বাসিন্দা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়েছেন এবং নিখোঁজদের খোঁজ এখনো চলমান রয়েছে।