ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়াহর প্রভাবে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা। টানা ভারী বর্ষণে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০-এ, আর নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ২১ জন। সপ্তাহজুড়ে চলমান প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সংখ্যা আরও বাড়ছে বলে জানিয়েছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র।
বৃহস্পতিবার রাতে শ্রীলঙ্কার পত্রিকা নিউজফার্স্ট জানিয়েছে—দেশটির বাদুল্লা, ক্যান্ডি, কেগালে, কুরুনেগালা, মতালে, মনারাগালা ও নুয়ারা এলিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা তীব্র হয়ে ওঠায় জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। অন্তত ২০টি জেলায় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাদুল্লা, ক্যান্ডি, নুয়ারা এলিয়া, চিলাও, পুত্তালাম ও আম্পারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে সর্বোচ্চ ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বাদুল্লায়। ক্যান্ডি জেলায় পাঁচজন নিহত ও দুজন নিখোঁজ হওয়ার পর সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। জেলাটিতে ১ হাজার পরিবারের সাড়ে তিন হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে ৩৭টি বাড়ি এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯৯ টি।
নুয়ারা এলিয়ায় ছয়জনের মৃত্যু ও চারজন নিখোঁজ রয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ১৭১ পরিবারের ৬১৩ জনকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮৪টি বাড়ি।
আম্পারায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে ২ হাজার ৩০০ পরিবারের ৭ হাজার ৪০০ জন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কুরুনেগালায় ১ হাজার ৫৩৬ পরিবারের ৫ হাজার ৪০১ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৭৭টি বাড়ি। মতালেও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৮৮টি পরিবার। রত্নাপুরায় ১০৮ পরিবারের ৭৬৮ জন এবং গলে এক মৃত্যুসহ ৫৩৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কলম্বোয় ১২১ পরিবারের ৫০০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, দুজন আহত হয়েছেন এবং ১১৬টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে জাফনা রুট ছাড়া রাতের সব মেল ট্রেন বাতিল করেছে। বিদ্যুৎবিভ্রাটেও দেশজুড়ে দুর্ভোগ চলছে। সিলন ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের তথ্যমতে, ৪৫ হাজার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও প্রায় ২৮ হাজার সংযোগ পুনরায় চালু করা সম্ভব হয়েছে।
শিশুদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ২৮ নভেম্বর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশব্যাপী সব প্রি-স্কুল ও শিশু শিক্ষা কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রান্না করা খাবার, শুকনো খাদ্যসামগ্রী ও চিকিৎসা সহায়তা বিতরণ করছে বিভিন্ন সংস্থা। জরুরি পরিস্থিতিতে নাগরিকদের ১১৭ নম্বরে কল করতে এবং সম্ভাব্য বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।