মার্কিন বিমানবাহিনীর বড়সড় উড়োজাহাজটা উড়বে কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। রানওয়ে ধরে কেবল চলতে শুরু করেছে। উড়োজাহাজের সামনে, দুই পাশে এবং পেছনে দৌড়াচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। কয়েকজনকে দেখা গেল উড়োজাহাজের গা বেয়ে উঠতে। এরপর ঝুলে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা। যেভাবেই হোক চড়ে দেশ ছাড়তে হবে।
কয়েক সেকেন্ডের এই ভিডিওর পর ছোট্ট আরেকটি ভিডিও। উড়োজাহাজটি ততক্ষণে উঠে গেছে কয়েক শ ফুট ওপরে। তখনই উড়োজাহাজ থেকে টপটপ করে রানওয়েতে আছড়ে পড়ল দুই-তিনজন।
তালেবানকে হটিয়ে ২০ বছর আগে কাবুলে নিজেদের পছন্দের সরকার বসিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এরপর দুই দশক ধরে তালেবান নিধন অভিযানে কত বোমা হামলা, বিমান হামলাই করেছে তারা। এতে যত না তালেবান মরেছে, তার চেয়ে শত গুণ বেশি মারা পড়েছে সাধারণ বেসামরিক মানুষ। আফগান বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে যুক্তরাষ্ট্র খরচ করেছে হাজার হাজার কোটি ডলার। কিন্তু মার্কিন বাহিনী আফগান মাটি ছাড়ার ঘোষণা দিতেই কেমন যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল তাদের এত আয়োজন। যেন যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার সময় আফগানদের আকাশ থেকে ফেলে গেল।
আফগানিস্তান তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর গতকাল সোমবার ছিল প্রথম দিন। এদিন তেমন কোনো রক্তক্ষয়ের কথা শোনা যায়নি। তালেবানের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, বেসামরিক নাগরিকদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তারা কোনো প্রতিশোধ নেবে না।
বিমানবন্দরে একাংশের নিয়ন্ত্রণ নিতে দেখা যায় মার্কিন সেনাদের। চিনুক হেলিকপ্টারে করে কাবুল ছাড়েন অনেক মার্কিন সেনা। এর মধ্যে বিমানবন্দরে গুলির শব্দও শোনা যায়। গুলি কারা করেছিল তা অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। এই তালেবান শাসনে অন্যান্য দেশের যেসব নাগরিক আটকা পড়েছে তাঁদের সরিয়ে নিতে গতকাল দিনভর চেষ্টা করেছে তাদের দেশের সরকার।
এর মধ্যে সরকার গঠনের জন্য তালেবান উদ্যোগ শুরু করেছে বলে শোনা যাচ্ছে। আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ তালেবানের হাতে, এটা এখন নিশ্চিত। কিন্তু সেখানকার মানুষের ভাগ্যে কী আছে, তা এখনো অনিশ্চিত। তারা ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান শাসন দেখেছে।
আফগানিস্তানের নাগরিকদের মধ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি সংশয় ও শঙ্কায় রয়েছেন নারীরা। এরই মধ্যে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত নারীরা তাঁদের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ-সম্পর্কিত নানা খবর এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। তালেবান নেতারা একদিকে ‘নারী অধিকারকে সম্মান জানানোর’ কথা বলছেন, অন্যদিকে দেয়াল বা বিলবোর্ডে থাকা নারীদের ছবি মুছে ফেলছেন। এই মুছে ফেলার একটি প্রতীকী অর্থ আছে, যা দেশটির নারীরা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন। কারণ, ১৯৯৬ সাল থেকে প্রায় ছয় বছরের তালেবান শাসনের অধীনে তাঁরা কেমন ছিলেন, তা তাঁরা জানেন।
তবে সবার মধ্যে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, তালেবান এত সহজে ক্ষমতা দখল করল কীভাবে? উত্তর খুঁজতে হলে তাকাতে হবে আশরাফ গনির চলে যাওয়ার ধরন এবং তাঁর সরকারের দুর্নীতি ও ভীরুতা নিয়ে চলা আলোচনার দিকে। দেশটির সাবেক নিরাপত্তা ও সামরিক বাহিনীর কমান্ডারদের অনেকেই এখন মুখ খুলছেন। এমনকি তাঁরা এই সন্দেহও প্রকাশ করছেন যে, আশরাফ গনি সরকার তালেবানের হাতে পরিকল্পিতভাবে ক্ষমতা তুলে দিয়েছে।