গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রহস্যজনক অনুপস্থিতি ও তাঁর স্বাস্থ্যের বিষয়ে জল্পনার অবসান হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) তাঁর বোন উজমা খান অবশেষে আদিয়ালা কারাগারে ইমরানের সঙ্গে দেখা করতে সক্ষম হন এবং জানান—তিনি বেঁচে আছেন, শারীরিকভাবে সুস্থ, তবে দীর্ঘ একাকী কারাবাসে ক্ষুব্ধ।
এদিকে, আরও এক বোন আলিমা খান স্বাধীন গণমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট উর্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, ইমরান খানের মৃত্যু নিয়ে ছড়ানো গুজব ছিল ‘জনপ্রতিক্রিয়া পরিমাপের টেস্ট রান’। তাঁর অভিযোগ—রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষই এই গুজব ছড়িয়েছে, যেন বোঝা যায়—ইমরান মারা গেলে জনগণের মধ্যে এর কী প্রতিক্রিয়া হয়।
কয়েক সপ্তাহ ধরে সামাজিক মাধ্যমে ইমরান খানের মৃত্যু অথবা তাঁকে গোপনে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার খবর ছড়ায়। এ সময় ডিজিটালভাবে তৈরি তাঁর মরদেহের ভুয়া ছবিও ছড়িয়ে পড়ে। ইমরানের সঙ্গে তাঁর পরিবার ও আইনজীবীদের সাক্ষাতের অনুমতি না দেওয়ায় উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়। পরে সরকারি সূত্র জানায়—তিনি জীবিত আছেন।
আলিমা খান দাবি করেছেন, প্রায় এক বছর আগে তাঁদের কাছে বার্তা এসেছিল—দুই মাসের মধ্যে ইমরান খানকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, ইমরানকে সম্পূর্ণ একাকী রেখে মানসিক চাপ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি তাঁকে বই পড়ার সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না।
আলিমা জানান, আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় ইমরান খান শুধু দুটি জিনিসই চান—সন্তানদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি এবং বই পড়ার সুযোগ। অথচ গত এক বছরে তাঁকে সন্তানদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে মাত্র তিন-চারবার। যদিও নিয়ম অনুসারে, এই সাক্ষাৎ প্রতি সপ্তাহেই হওয়ার কথা।
এদিকে ইমরান খানের দুই ছেলে—কাশিম ও সুলায়মান পাকিস্তানে প্রবেশের অনুমতি না পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে অবস্থান করে আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন।
ইমরান খানকে ২০২২ সালে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং এরপর একাধিক মামলায় তাঁকে সাজা বা অভিযোগের মুখে পড়তে হয়েছে। তাঁর দল দাবি করছে, সাম্প্রতিক সাংবিধানিক পরিবর্তনের সমালোচনা ঠেকাতেই সরকার তাঁর অবস্থান, যোগাযোগ ও বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ করছে।
আলিমা খান প্রশ্ন তুলেছেন—কেন কমনওয়েলথ বা যুক্তরাজ্য এ বিষয়ে নীরব। তবে তাঁর বিশ্বাস, শেষপর্যন্ত পাকিস্তানের জনগণই নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।