থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬২ জন। এই পরিস্থিতিতে সরকার বন্যা ব্যবস্থাপনায় নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েছে। এরপর আজ শনিবার থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জন্য নতুন করে পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ও ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিয়েছেন।
বার্তা সংস্থা এপি থাইল্যান্ডের দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রশমন বিভাগের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, দক্ষিণের ১২টি প্রদেশে ভারী বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট এই বন্যায় ১৪ লাখের বেশি পরিবার এবং ৩৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
থাই সরকারের মুখপাত্র সিরিপং অঙ্গাসাকুলকিয়াত ব্যাংককে এক সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেছেন, আটটি প্রদেশে মোট ১৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সংখলা প্রদেশেই অন্তত ১২৬ জন মারা গেছে।
সরকারের মুখপাত্র সিরিপং আরও জানান, রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাত ইয়াই হাসপাতালের জন্য ১০০ মিলিয়ন বাত (প্রায় ৩.১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) অনুদান দেবেন। এ ছাড়া বন্যায় নিহত সব ক্ষতিগ্রস্তের শেষকৃত্যের জন্য রাজা রাজকীয় সহায়তা দেবেন।
এদিকে, ভয়াবহ বন্যা ও প্রাণহানির কারণে সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বন্যা ব্যবস্থাপনায় সরকারের ব্যর্থতা স্বীকার করছেন। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের সময় তিনি জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, ‘সরকার তাদের সুরক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি।’
প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, সরকার আগামী সপ্তাহ থেকে বন্যা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ক্ষতিপূরণ বিতরণ শুরু করবে। তিনি অন্যান্য ত্রাণ ব্যবস্থারও রূপরেখা দেন। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর মেরামতের জন্য স্বল্পমেয়াদি সুদবিহীন ঋণ দেওয়া হবে।
থাই দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রশমন বিভাগ জানিয়েছে, শনিবার সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত সব প্রদেশে পানির স্তর কমতে শুরু করেছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের বাড়িতে ফিরে আসছে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখছে। আসবাব ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র মেঝেতে ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
গত সপ্তাহে শুরু হওয়া এই বন্যায় হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়েছিল। রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল এবং নিচু ভবন ও যানবাহন পানিতে ডুবে গিয়েছিল। উদ্ধার অভিযান যত এগোচ্ছে, তত মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, ইন্দোনেশিয়ায় এক সপ্তাহ ধরে ঘূর্ণিঝড়-তাড়িত প্রবল বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা ৩০৩ জনে পৌঁছেছে। দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, এই সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, উদ্ধারকারীরা এখনো ডুবে যাওয়া ও ধ্বংস হয়ে যাওয়া অনেক এলাকায় পৌঁছাতে পারেনি।
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা (বিএনপিবি) শনিবার জানিয়েছে, এই সপ্তাহের ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩০৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। পশ্চিম সুমাত্রার আগাম জেলায় উদ্ধারকর্মীরা আরও কিছু মৃতদেহ উদ্ধার করার পর এই সংখ্যা বেড়েছে।
ভিয়েতনামেও ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এশিয়ার আরও এক দেশ শ্রীলঙ্কায় ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়াহর প্রভাবে সৃষ্ট প্রবল বর্ষণ ও বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১৩২ জনে পৌঁছেছে। এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জরুরি সহায়তা চেয়েছে। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র (ডিএমসি) জানিয়েছে, এখনো ১৭৬ জন নিখোঁজ রয়েছে।
ডিএমসি শনিবার (২৯ নভেম্বর) জানিয়েছে, চরম আবহাওয়ার কারণে সারা দেশে প্রায় ১৫ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং প্রায় ৪৪ হাজার মানুষ সরকারি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।