নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে সোমবার চারটি ইউরোপীয় দেশ নিঃশর্তভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আরও তিনটি ইউরোপীয় দেশ জানিয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ হলে তারা ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।
ফ্রান্স, মাল্টা, লুক্সেমবার্গ ও মোনাকো ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় ‘প্যালেস্টাইন প্রশ্নের শান্তিপূর্ণ সমাধান ও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন’ শীর্ষক সম্মেলনে। এই সম্মেলন যৌথভাবে আয়োজন করে ফ্রান্স ও সৌদি আরব।
বেলজিয়াম জানায়, হামাসকে সরকার থেকে সরানো এবং ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পর তারা ফিলিস্তিনকে শর্তসাপেক্ষে স্বীকৃতি দেবে। ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডস জানিয়েছে, নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলে পরবর্তীতে তারা স্বীকৃতি দেবে।
৩০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধি এই সম্মেলনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে বক্তব্য দেন। রোববার ও সোমবার যেসব আট দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে, তাদের নেতাদের বক্তৃতার সময় করতালিতে ভরে ওঠে সভাকক্ষ।
সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ছিলেন সবার নজরের কেন্দ্রে। তিনি মঞ্চের দিকে একটি পদক্ষেপ নিতেই একঝাঁক কূটনীতিক তাঁকে ঘিরে ধরেন, কেউ করমর্দন করেন, কেউ আলিঙ্গন করেন, কেউ আবার সস্নেহে চুম্বন জানান।
মাখোঁ সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে ‘সময় এসে গেছে’—এই মূল বার্তা সামনে আনেন। তিনি বলেন, ‘সময় এসে গেছে, কারণ জরুরি অবস্থা সর্বত্র। শান্তির সময় এসে গেছে, কারণ আমরা সেই মুহূর্তের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি, যেখান থেকে হয়তো আর তা ধরতে পারব না। এ কারণেই আজ আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। কেউ বলবেন অনেক দেরি হয়ে গেছে, কেউ বলবেন অনেক তাড়াতাড়ি। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত—আমরা আর দেরি করতে পারি না।’
তিনি বলেন, ইসরায়েলিরা যেখানে ‘একটি প্রাণবন্ত গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করেছে, সেখানে ‘একটি আরব রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি এখনো অপূর্ণ রয়ে গেছে।
মাখোঁ যোগ করেন, ‘সত্যিটা হলো, আমরা সবাই মিলেই এ পর্যন্ত নিকটপ্রাচ্যে একটি ন্যায়সংগত ও স্থায়ী শান্তি গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছি, এর দায় আমাদের সবার।’
এ সময় তিনি জনপ্রিয় ফিলিস্তিনি কবি ও লেখক মাহমুদ দারবিশকে স্মরণ করেন। মাখোঁ বলেন, ‘মাহমুদ দারবিশের ভাষায়, এই স্বীকৃতি হলো এই ঘোষণা যে—ফিলিস্তিনি জনগণ কোনো অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় জনগোষ্ঠী নয়। বরং তারা এমন এক জাতি, যারা কখনোই কোনো কিছুর সঙ্গে বিদায় বলে না।’
তাঁর এই বক্তব্যে পুরো সম্মেলনকক্ষ দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে অভিবাদন জানায়।