ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের বিরুদ্ধে শতাধিক নারীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি অবশেষে আদালতের মাধ্যমে ১০০ কোটি ডলারে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সমঝোতা করতে রাজি হয়েছে।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টি ২১৫ মিলিয়ন ডলারে সমঝোতা করতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আরো বিপুল সংখ্যক নারী লস এঞ্জেলেসের একটি আদালতে অভিযোগ দায়ের করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভুক্তভোগীদের আরো ৮৫২ মিলিয়ন ডলার দিতে নির্দেশ দেয় আদালত।
এ রায়ের ব্যাপারে ভুক্তভোগীদের আইনজীবী গ্লোরিয়া অলরেড বলেন, দেওয়ানি মামলার ইতিহাসে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ যৌন হয়রানির অভিযোগ এটা। যা শেষ পর্যন্ত নিষ্পত্তি হলো।
সাবেক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ জর্জ টিন্ডালের ৩০ বছরের ক্যারিয়ারে শত শত নারীর ওপর যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় তিনি যৌন হয়রানি করতেন। অভিযোগে এমনটিই বলা হয়েছে।
১৯৯০ সাল থেকে বিভিন্ন সময় তার বিরুদ্ধে নারীদের শরীরে অযাচিত স্পর্শ ও ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। সবচেয়ে কম বয়সী অভিযোগকারীর বয়স ১৭ বছর।
বর্তমানে টিন্ডালের বয়স ৭৪ বছর। তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় যৌনাঙ্গের ছবি তোলা, স্তনে স্পর্শ করা, শারীরিক গঠন নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্য করা। পাশাপাশি বর্ণবাদ ও সমকামবিরোধী মন্তব্যও করতেন তিনি।
তিনি মূলত সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের টার্গেট করতেন। এশিয়ার শিক্ষার্থীরাও ছিল তার টার্গেটে। হাজার হাজার রোগী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছিল না বিশ্ববিদ্যালয়। পরে আদালতে গিয়ে সেটির নিষ্পত্তি হলো।
২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় তার বিরুদ্ধে তদন্ত করেনি। তার সঙ্গে একটি চুক্তি করে অবসরে পাঠানো হয়।
বৃহস্পতিবার মামলার বাদী জেন দো ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, সঙ্গে থাকা নার্সরাও তার আচরণে অস্বস্তিবোধ করতেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালে ২১৫ মিলিয়ন ডলারে অভিযোগকারী ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আরো ৭০০ নারী আদালতে অভিযোগ করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার নিউ গ্লোবাল সেটেলমেন্টে আদালত রায়ে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরও ৮৫২ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে। সে হিসাবে প্রতিজন ভুক্তভোগী পাবেন প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে ক্ষতিপূরণের পরিমান দাঁড়ায় ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি।
২০১৮ সালে একশ অধ্যাপকের চাপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ক্যারট ফোর্ট এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে জেলা অ্যাটর্নির কার্যালয় জানিয়েছে, ওই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বিচারের অপেক্ষায় আছেন। দোষী সাব্যস্ত হলে তার ৫৩ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।