সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে একা একা প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্রিজবেনের তরুণ টম রবিনসন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভাগ্য তাঁর সহায় হয়নি। উল্টে যায় তাঁকে বহনকারী ও নিজ হাতে তৈরি বইঠাচালিত ছোট্ট নৌকাটি।
আজ শুক্রবার সকালে ভানুয়াতু দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে টমকে উদ্ধার করেছে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক একটি প্রমোদতরি। নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে ৯ দিনের একটি ট্রিপে বেরিয়েছিল ওই জাহাজ। পরে নিউ ক্যালেডোনিয়া মেরিন রেসকিউ কো-অর্ডিনেশন সেন্টার থেকে জাহাজটিতে কল করে বিপদাপন্ন টমকে উদ্ধারের বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়।
বিবিসি ও ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা হলেও প্রশান্ত মহাসাগরের অন্য পাড়ের দেশ পেরু থেকে এক বছরেরও বেশি সময় আগে যাত্রা শুরু করেছিলেন টম। উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ব রেকর্ড গড়ে স্বদেশে পা রাখবেন তিনি। দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার শেষ অংশ পাড়ি দিতে ভানুয়াতু থেকে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড পৌঁছাতে দিন কয়েক আগেই যাত্রা করেছিলেন। এর মধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনাটি। উল্টে যায় ২৪ ফুট দীর্ঘ নৌকাটি।
উদ্ধারের জন্য প্রমোদতরিটি যখন টমের কাছাকাছি পৌঁছায় তখন দেখা যায়—উল্টে যাওয়া নৌকাটির ওপর উলঙ্গ হয়ে বসে আছেন তিনি। পানিশূন্যতা ছাড়াও তাঁর শরীর ছিল রোদে পোড়া। তবে সবল অবস্থায় ছিলেন টম। উদ্ধারের পর তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি কাপড়চোপড় ও গরম খাবার সরবরাহ করা হয়।
উদ্ধারের জন্য প্রমোদতরি কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন টম। গত সপ্তাহেই এবিসি অস্ট্রেলিয়াকে তিনি জানিয়েছিলেন, সমুদ্রযাত্রার শেষ অংশ পাড়ি দিতে ভানুয়াতু দ্বীপের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লুগানভিল্লে থেকে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড উপকূল বরাবর নৌকা পরিচালনা করবেন।
কৈশোর থেকেই প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন ছিল টমের। প্রায় এক যুগ পর তিনি তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে ছিলেন। তবে যাত্রাপথে তিনি নানা ধরনের বিপত্তির মুখোমুখি হয়েছেন। যাত্রার মাঝপথে চিকিৎসার জন্য কুক আইল্যান্ডস দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপে বেশ কিছুদিনের বিরতিতে ছিলেন। টম বলেন, ‘আমি একটি চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছিলাম। এই রোগটি আমার দুই পা-জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল।’
এ ছাড়া ঝড়ের মুখোমুখি কিংবা আরও অনেক বিপত্তিই ঘটেছিল। বিশেষ করে হাঙর খুব যন্ত্রণা দিয়েছে। যাত্রা শুরু করার পাঁচ মাসের বেশি সময় পর তিনি কুক আইল্যান্ডসে পৌঁছেছিলেন। দ্বীপের বাসিন্দারা তাঁকে সাদরে বরণ করেছিল এবং নাম দিয়েছিল ‘মাহুতা-হয়েহয়ে-আসাঙ্গা’। এর অর্থ হলো ‘বহু দূর থেকে বইঠা চালিয়ে আসা যোদ্ধা’।
বিশ্ব রেকর্ড গড়তে না পারলেও সমুদ্রে সংগ্রামের দিনগুলো টমের অনুপ্রেরণা হবে—এমনটাই আশা করছেন শুভাকাঙ্ক্ষীরা।