হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

আগেই ইরানে ঢুকে যেভাবে হামলার ক্ষেত্র গড়ে তুলেছিল মোসাদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

ইসরায়েলি হামলায় ইরানের তেহরানে ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবন। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানগুলো গতকাল শুক্রবার যখন ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনার দিকে উড়ে যাচ্ছিল, তখন ইরানের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা মোসাদের ছদ্মবেশী সশস্ত্র গোয়েন্দা দল, একঝাঁক সশস্ত্র ড্রোন এবং সাধারণ যানবাহনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা বিস্ফোরক খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে। এসব মারণাস্ত্র ইরানের ঘুমন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও স্থাপনার দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

ইরানে সামরিক কমান্ডার, পরমাণুবিজ্ঞানী এবং অভিজাত বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) নেতারা ছিলেন হামলার লক্ষ্যবস্তু। তাঁদের অনেকেই তখনো ‘নিজের বিছানায়, নিজের বাড়িতে’ ছিলেন বলে জানিয়েছেন এক ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা। এ অভিযানের বিষয়ে তিনি সরাসরি অবগত আছেন। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টকে অভিযানসংক্রান্ত অপ্রকাশিত বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন।

ইসরায়েলি ও পশ্চিমা নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং ইরান সরকারের বিভিন্ন বিবৃতিতে বলা হয়, ভোর হওয়ার আগেই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ বলয়ের বিভিন্ন সদস্য এবং পারমাণবিক কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নিহত হন। ইসরায়েলি ও পশ্চিমা নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এবং সরকারপক্ষের দেওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, তাঁদের অনেকেই বিস্ফোরকভর্তি ড্রোন কিংবা অন্যান্য যন্ত্রের আঘাতে নিহত হন। এসব বিস্ফোরক তেহরানের কেন্দ্রস্থলে আবাসিক ভবন ও অন্যান্য স্থাপনার পাশে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গর্তৈল সৃষ্টি করেছে।

ইসরায়েলের উগ্রপন্থী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘রাইজিং লায়ন’। এ অভিযানের জন্য একটি গোপন গোয়েন্দা দলকে সক্রিয় করা হয়। পাশাপাশি সক্রিয় করা হয় ইরানের ভেতরে মজুত করে রাখা অস্ত্রের গুদাম এবং অন্যান্য সক্ষমতা। এসব গোয়েন্দা ও অস্ত্রশস্ত্র সপ্তাহ কিংবা মাসের পর মাস ইরানের ভেতরেই নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল।

ওই জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল হামলার পরিকল্পনার প্রথম ধাপের একটি অংশ। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড এবং ইরানি শাসনব্যবস্থার নীতিনির্ধারকদের হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলার পরিকল্পনা করা হয়। তিনি আরও বলেন, ‘তাঁরা কোন কোন জায়গায় ছিলেন, তাও আমরা জানতাম।’

ইরানে এই হামলার সাফল্য তুলে ধরার স্বার্থে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এবং আরও কয়েকজন ব্যক্তি ওয়াশিংটন পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন। অভিযানের গোপনীয়তার কারণে তাঁরা নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়েছেন।

গতকাল ভোররাতে গোপনে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপর হামলা চালানো হয়। পরে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলার ব্যাপ্তি বাড়ানো হয়। পরে তা ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলায় রূপ নেয়। অর্থাৎ গোপন হত্যাকাণ্ড দিয়ে শুরু হলেও পরে খোলামেলা সামরিক অভিযান শুরু হয়।

গোপন অভিযানের প্রথম ধাপে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন ইরানের সামরিক বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি এবং তেহরানে অবস্থিত ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ও পদার্থবিজ্ঞানী মোহাম্মদ মেহদি তেহরাঞ্চি।

আরেক জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, এই হত্যাকাণ্ডগুলো ছিল বহুস্তরবিশিষ্ট একটি অভিযানের অংশ। এর নেতৃত্বে ছিল ইসরায়েলের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই অভিযান গতি পেলেও দীর্ঘ সময় ধরে এর ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছিল। অভিযান সফল করতে সাহসী ও সুপরিকল্পিত পরিকল্পনার পাশাপাশি বিভ্রান্তিমূলক কর্মকৌশলও ব্যবহার করা হয়েছে।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা আবার শুরু করে তখন এই অভিযান বাস্তবায়ন পরিকল্পনার চূড়ান্ত ধাপের প্রস্তুতি চলছিল। এই ধাপে মোসাদের গোয়েন্দাদের বিপুল পরিমাণে বিশেষ অস্ত্র গোপনে ইরানে পাচার করার এবং দেশজুড়ে সেগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যাতে নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত নিশানা লক্ষ্য করে সেগুলো ব্যবহার করা যায়।

এসব অস্ত্র মোসাদ কীভাবে ইরানে পাচার করেছিল, সে সম্পর্কে অবশ্য এসব ইসরায়েলি কর্মকর্তারা স্পষ্ট কোনো ধারণা দেননি।

ইসরায়েলি এই হামলার কৌশলগত প্রভাব নির্ণয় করতে আরও কিছুদিন বা কয়েক সপ্তাহ লাগবে বলে জানিয়েছেন পশ্চিমা নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলেন, এই হামলা ইরানের কথিত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রয়াসে বড় ধরনের ধাক্কা দিলেও তা স্থায়ী হবে কি না, এখনই বলা যাচ্ছে না। ইরান অবশ্য বরাবরই দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত।

একসঙ্গে এতগুলো নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিকে একযোগে হত্যার ঘটনাটি প্রমাণ করল যে ইরান নিজেদের সেনাপ্রধান, বিজ্ঞানী ও সেনা কর্মকর্তাদের এমন শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে, যারা কি না এসব ব্যক্তিকে বহু বছর ধরেই হত্যার পরিকল্পনা করছিল।

অনেকটা সন্ত্রাসী কায়দায় ইসরায়েলি কর্মকর্তারা গতকাল হুমকি দিয়ে বলেছেন, ইরানের শীর্ষ নেতাদের নির্মূল করার এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

প্রথমে কথা বলা ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, ইরানের দ্বিতীয় স্তরের যেসব কমান্ডার ও শাসনব্যবস্থার কর্মকর্তাদের ইসরায়েল হত্যা করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে, তাদের হুমকি দিয়ে বার্তা পাঠিয়েছে মোসাদ।

কেউ দরজার নিচ দিয়ে চিঠি পেয়েছেন, আবার কেউ ফোনকল পেয়েছেন কিংবা কারও স্ত্রীকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই বার্তাগুলোর লক্ষ্য ছিল পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া যে মোসাদ জানে, ওই কর্মকর্তারা কে কোথায় আছেন এবং তাঁরা মোসাদের নাগালেই আছেন।

মোসাদের এই হুমকিকে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি নিহত ইরানি নেতাদের উদ্দেশে লিখেন, ‘তাঁরা সবাই এখন মৃত’। এরপর তিনি ইরানকে সতর্ক করেন, যদি তাঁরা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা বন্ধ না করেন, তবে আরও ভয়াবহ হামলা আসবে।

এই অভিযানের প্রথম ধাপকে ‘নির্মূল অভিযান’ বলা হচ্ছে। এটি ছিল মোসাদের বড় অভিযান ‘রাইজিং লায়ন’-এর একটি অংশ। এই পুরো অভিযান বাস্তবায়ন করতে বহু বছর ধরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছে মোসাদ। তারা ইরানি নেতাদের অবস্থান ও তথ্যসংবলিত ফাইল তৈরি করেছে। এর মধ্যে তাঁদের বাসা, বাংকার, গোপন আশ্রয়স্থলের তথ্যও ছিল।

দ্বিতীয় ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, অতি সম্প্রতি ইহুদিবাদী রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ইউনিটগুলো ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অকার্যকর করার উদ্দেশ্যে খোলা জায়গায় নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্র স্থাপন করে। বিশেষ করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যাটারি কাছাকাছি এসব অস্ত্র বসানো হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল, হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় করে ফেলা।

মোসাদ আরও আগে থেকেই ইরানের ভেতরে বিস্ফোরক ড্রোনের একটি ঘাঁটি গড়ে তোলে। ওই কর্মকর্তা বলেন, হামলার আগে এসব ড্রোন সক্রিয় করা হয় এবং সেগুলো তেহরানের কাছাকাছি এসফাজাবাদে ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের দিকে পাঠানো হয়।

ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে—এমন অন্যান্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় করতে সাধারণ যানবাহনের ভেতরে বিস্ফোরক ও উন্নত প্রযুক্তি লুকিয়ে রেখেছিল মোসাদ। দূর থেকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এসব বিস্ফোরক দিয়ে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস কিংবা বিপর্যস্ত করা যায়।

প্রথম ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, এই অভিযানের আরেকটি লক্ষ্য ছিল ক্ষেপণাস্ত্র পরিবহনকারী ট্রাক। তিনি বলেন, প্রতিটি ট্রাক ধ্বংস করা মানে চারটি ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতা শেষ করে দেওয়া।

জাপানে তুষারপাতে পিচ্ছিল রাস্তায় ৫০টি গাড়ির সংঘর্ষ, নিহত ২

গাজা স্থিতিশীলতা বাহিনীতে যোগ দিতে প্রস্তুত পাকিস্তান, তবে আপত্তি হামাসকে নিরস্ত্র করার শর্তে

ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকের আগে ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

গুয়াতেমালায় বাস খাদে পড়ে নিহত অন্তত ১৫, আহত ১৯

সোমালিল্যান্ডকে ইসরায়েলের স্বীকৃতি—‘রাষ্ট্রীয় আগ্রাসন’ আখ্যা দিয়ে প্রতাহারের দাবি সোমালিয়ার

বেঙ্গালুরুতে ‘বুলডোজার রাজ’: ৪০০ মুসলিম পরিবারকে উচ্ছেদ, তোপের মুখে কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার

নাইজেরিয়ায় হামলা: ‘বড়দিনের উপহার’ বলে উদ্‌যাপন ট্রাম্প প্রশাসনের, স্থানীয়রা বলছেন—‘কখনো আইএস দেখিনি’

রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর দ্বিতীয়বার যুদ্ধবিরতিতে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া

চীনা প্রযুক্তির প্রথম যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের ককপিটে প্রথম নারী ক্যাপ্টেন

২ সেকেন্ডে ঘণ্টায় ৭০০ কিমি গতি, চোখের পলকে ছুটে বিশ্ব রেকর্ড গড়ল চীনের ট্রেন