চলমান দুর্নীতি মামলায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘পূর্ণ ক্ষমা’ চেয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই চিঠি তিনি সরাসরি ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে লিখেছেন।
ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে প্রকাশিত ওই চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমি আপনাকে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সম্পূর্ণরূপে ক্ষমা করার আহ্বান জানাচ্ছি। যুদ্ধকালীন তিনি একজন শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন তিনি ইসরায়েলকে শান্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’
একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ অস্বাভাবিক হলেও ট্রাম্পের জন্য এটি নতুন নয়। তিনি আগেও এভাবে বিভিন্ন দেশে থাকা তাঁর প্রিয় মানুষদের রক্ষা করতে এমন কাজ করেছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শুরুতে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক মামলায় যথাক্রমে জালিয়াতি, ঘুষ এবং বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। তবে নেতানিয়াহু নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বারবার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ট্রাম্প তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, ‘যদিও আমি ইসরায়েলি বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং এর প্রয়োজনীয়তাকে শ্রদ্ধা করি, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, বিবির বিরুদ্ধে মামলাটি রাজনৈতিক ও অযৌক্তিক। আমরা দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে ইসরায়েলের কঠিন প্রতিপক্ষ ইরানের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।’
প্রেসিডেন্টের ভূমিকাটি মূলত আনুষ্ঠানিক হলেও ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগের ক্ষমা করার ক্ষমতা রয়েছে। তবে এর জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি, তাঁদের আইনজীবী বা পরিবারের সদস্যের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করতে হয়। নেতানিয়াহু বা তাঁর কোনো ঘনিষ্ঠ কেউ এখন পর্যন্ত এমন কোনো আবেদন জমা দেননি।
হেরজগের দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পকে শ্রদ্ধা করে। ইসরায়েলের প্রতি তাঁর অবিচল সমর্থন, জিম্মিদের প্রত্যাবর্তনে তাঁর বিশাল অবদান, মধ্যপ্রাচ্য ও গাজার পরিবর্তন এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা রক্ষায় তাঁর ভূমিকার প্রশংসা করে। তবে হেরজগের দপ্তর স্পষ্ট করে বলেছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি ক্ষমা চান, তাঁকে অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি অনুযায়ী আবেদন জমা দিতে হবে।’
এদিকে ট্রাম্পের এই চিঠি ইসরায়েলের রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
কট্টর ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গাভির এক্সে লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট হেরজগ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথা শুনুন!’ তিনি দাবি করেন, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই অভিযোগের’ শামিল হয়েছে।
বিরোধী দলের নেতা ইয়াইর লাপিদ বলেন, ‘মনে রাখবেন, ইসরায়েলি আইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমার প্রথম শর্ত হলো দোষ স্বীকার করা এবং অনুশোচনা প্রকাশ করা।’
নেতানিয়াহু ইসরায়েলের ইতিহাসে প্রথম ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী, যিনি পদে থাকাকালীন ফৌজদারি মামলার সম্মুখীন হচ্ছেন। ঘুষ, জালিয়াতি এবং বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ২০২০ সালের মে মাসে তাঁর বিচার শুরু হয়েছিল। নেতানিয়াহুর নিজের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, তবে তাঁর অনুরোধে বারবার বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্ব ও বাতিল করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিচার, রায় এবং সম্ভাব্য আপিলের বিভিন্ন পর্যায় বিবেচনায় এই প্রক্রিয়া আরও কয়েক বছর ধরে চলবে।
অন্য দেশের চলমান বিচারিক কার্যক্রমে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে গত জুলাইয়ে এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ট্রাম্প তাঁর আরেক আন্তর্জাতিক সহযোগী, ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর (যিনি অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন) বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য ব্রাজিলীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
এরপর এপ্রিলে ট্রাম্প ফরাসি কট্টর ডানপন্থী নেতা মেরিন লো পেনের জন্য পোস্ট দিয়েছিলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের তহবিল তছরুপের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় লো পেনকে পাঁচ বছরের জন্য রাজনৈতিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে লিখেছিলেন, মেরিন লো পেনের বিরুদ্ধে ‘উইচ হান্ট’ (ডাইনি খোঁজা অভিযান) হলো ইউরোপের বামপন্থীদের আরেকটি উদাহরণ; যেখানে তারা ‘আইনকে অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করে বাক্স্বাধীনতা দমন করছে এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চুপ করাচ্ছে। এবার তারা এত দূর গেছে যে প্রতিপক্ষকেই জেলে পাঠাচ্ছে। এটা সেই একই কৌশল, যা আমার বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হয়েছিল।