মেয়ে মিয়ার বয়স যখন মাত্র তিন বছর তখন এডিথ লেমে এবং সেবাস্তিয়ান পেলেটিয়ের দম্পতি প্রথম লক্ষ্য করেন তার দৃষ্টি সমস্যা হচ্ছে। এ কানাডীয় দম্পতি প্রথমবার তাকে একজন বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান। এর কয়েক বছর পর মিয়ার রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা রোগ ধরা পড়ে। এটি একটি বিরল জিনগত সমস্যা। এই সমস্যা হলে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়।
লেমে এবং পেলেটিয়েরের ১২ বছরের দাম্পত্য জীবন। চার সন্তানের মধ্যে মিয়া সবার বড়। মিয়ার রোগটি ধরা পড়ার পর তাঁরা লক্ষ্য করেন, দুই ছেলে কলিন (৭) এবং লরেন্টের (৫) একই উপসর্গ দেখা যেতে শুরু করেছে।
আশঙ্কার বিষয়টি তাঁরা নিশ্চিত হন ২০১৯ সালে। ছেলেদেরও একই জিনগত সমস্যা ধরা পড়ে। আরেক ছেলে লিও (৯) অবশ্য সমস্যামুক্ত।
লেমে মার্কিন সম্প্রচার মাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ‘আপনি সত্যিই কিছু করতে পারবেন না। রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসার সমস্যাটি জটিল হওয়ার গতি ধীর করার জন্য বর্তমানে কোনো নিরাময় বা কার্যকর চিকিৎসা নেই। আমরা জানি না এটি কত দ্রুত জটিল হবে। তবে আমাদের আশঙ্কা, তারা মধ্যবয়সে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যাবে।’
এই দম্পতি যখন সন্তানদের এই সমস্যার ব্যাপারে নিশ্চিত হোন তখন সিদ্ধান্ত নেন, সন্তানদের এই জীবন ভালোভাবে যাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা তৈরি করতে সহায়তা করার দিকে তাঁদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করবেন।
আর তখনই এ দম্পতি সন্তানদের নিয়ে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পড়ার পরিকল্পনা শুরু করেন।
লেমে এবং পেলেটিয়ের দম্পতি অবশ্য বাবা-মা হওয়ার আগে প্রায়ই একসঙ্গে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করতেন। সন্তান হওয়ার পরও ক্ষান্ত হননি তাঁরা। তবে দীর্ঘ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বেশ কঠিনই ছিল।
লেমে কাজ করেন একটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে। আর পেলেটিয়ের কাজ করেন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। দুজনে মিলে সঞ্চয় করতে শুরু করেন। পেলেটিয়ের যে কোম্পানিতে কাজ করতেন তারা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। ওই কোম্পানির শেয়ারও কিনেছিলেন তিনি।
তবে বিশ্বব্যাপী মহামারিতে ভ্রমণ বিধিনিষেধের কারণে তাঁরা ভ্রমণ পিছিয়ে দিতে বাধ্য হন। বিলম্বিত ভ্রমণসূচিও অসংখ্যবার পরিবর্তন করতে হয়েছে। অবশেষে ২০২২ সালের মার্চে মন্ট্রিল ছাড়েন তাঁরা।