ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত দুই ঘণ্টার এই বৈঠকে শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে বলে দুই নেতাই দাবি করেছেন। তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, পূর্ব ইউক্রেনের দনবাসের নিয়ন্ত্রণ এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির মতো কিছু ‘জটিল ইস্যু’ এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
বৈঠকের পর আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) জেলেনস্কি জানান, শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ১৫ বছরের নিরাপত্তা গ্যারান্টির প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয়ে ঐকমত্য প্রায় ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
জেলেনস্কি বলেছেন, খসড়া নথিতে যুক্তরাষ্ট্র ১৫ বছরের মেয়াদে নিরাপত্তা গ্যারান্টির প্রস্তাব দিয়েছে। তবে ইউক্রেন এই মেয়াদ ৩০ থেকে ৫০ বছর করার দাবি জানাচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে রাশিয়ার আক্রমণ স্থায়ীভাবে ঠেকানো যায়। এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউরোপীয় দেশগুলোকেও এই নিরাপত্তা প্রচেষ্টায় বড় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে বর্তমানে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দনবাস (দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক) অঞ্চল। রাশিয়া এই পুরো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ চায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ইস্যুটিকে ‘অমীমাংসিত’ বললেও দাবি করেছেন, তাঁরা সমস্যা সমাধানের খুব কাছাকাছি আছেন।
জেলেনস্কি প্রস্তাব দিয়েছেন, যেকোনো শান্তি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার আগে ইউক্রেনে একটি গণভোট হওয়া উচিত। আর এই ভোটের জন্য কমপক্ষে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। তবে ক্রেমলিন এই ধরনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের ঠিক আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ এক ঘণ্টা টেলিফোনে কথা বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুতিন ও ট্রাম্প একমত হয়েছেন, ইউক্রেন ও ইউরোপের প্রস্তাবিত অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি শুধু সংঘাতকেই দীর্ঘায়িত করবে।
পুতিন দাবি করেছেন, ইউক্রেনকে দনবাস, ঝাপোরিঝিয়া ও খেরসন থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে হবে এবং ন্যাটোতে যোগদানের আশা ত্যাগ করতে হবে।
জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি ‘ত্রিপক্ষীয় আলোচনার’ ইঙ্গিত দিয়েছেন। আগামী জানুয়ারি মাসে হোয়াইট হাউসে ইউরোপীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল এবং মার্কিন প্রতিনিধিদের মধ্যে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে আলোচনার মধ্যেও ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে পাল্টাপাল্টি ড্রোন হামলা অব্যাহত রয়েছে। রোববার রাতে রাশিয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ২৫টি ড্রোন হামলা চালায়, যার মধ্যে ২১টি ভূপাতিত করার দাবি করেছে কিয়েভ। অন্যদিকে রাশিয়া ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে ৮৯টি ইউক্রেনীয় ইউএভি প্রতিহত করার কথা জানিয়েছে।