সুদানে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত দুই পক্ষকে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। তিনি বলেছেন, তাদের সব অপরাধ আন্তর্জাতিক মহল নথিবদ্ধ করছে এবং একসময় তাদের জবাবদিহি করতেই হবে।
২০২৩ সালের এপ্রিলে সুদানি সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) ও প্যারামিলিটারি র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ। দেশটি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকটে ডুবে আছে।
সাম্প্রতিক সময়ে আরএসএফ দারফুরের গুরুত্বপূর্ণ শহর আল ফাশের দখল নিলে এই সহিংসতা নতুনভাবে বেড়ে যায়। এর পর থেকে গণহত্যা, নির্যাতন ও অন্যান্য নৃশংসতার খবর আসছে।
আজ শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের এক বিশেষ বৈঠকে ফলকার তুর্ক বলেছেন, ‘এই সংঘাতে জড়িত সবাইকে জানিয়ে দিই—আমরা তোমাদের ওপর নজর রাখছি এবং একসময় ন্যায়বিচার অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে।’
যুক্তরাজ্যের অনুরোধে এবং জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের সমর্থনে ডাকা এই বিশেষ অধিবেশনে ২৩টি পরিষদ সদস্য এবং ৩১টি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র সমর্থন দেয়। এর মাধ্যমে সুদানের পরিস্থিতিতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার শর্ত পূরণ হয়েছে।
অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলো সর্বসম্মতভাবে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে দারফুরের আল ফাশের শহর দখলের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও অপরাধ তদন্তে একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন গঠন করা হবে। আল ফাশের ছিল পশ্চিম সুদানের বিশাল অঞ্চলে সুদানি সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি।
এই মিশন শহরটিতে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, লুটপাট, নির্যাতনসহ সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ করবে এবং দায়ীদের শনাক্ত করবে।
তুর্ক বলেন, ‘আমার কর্মীরা এমন সব প্রমাণ সংগ্রহ করছেন, যা ভবিষ্যতে আইনগত প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা যাবে। আমরা ইতিমধ্যে পালিয়ে যাওয়া বেসামরিকদের সঙ্গে কথা বলতে বিভিন্ন স্থানে আমাদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছি এবং আরও পাঠাচ্ছি। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতও পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।’
ফলকার তুর্ক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আল ফাশের এবং আশপাশের অঞ্চল থেকে পালানো নাগরিকদের জরুরি সহায়তা, খাবার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানায়, আরএসএফ শহরটি দখল করার পর থেকে অন্তত ৯০ হাজার মানুষ পালিয়ে গেছে। গত দুই সপ্তাহের গোলাবর্ষণ ও স্থল আক্রমণে তারা বিপজ্জনক পথে পালাতে বাধ্য হয়েছে। এসব পথে খাবার, পানি বা চিকিৎসা কোনোকিছুই ছিল না।
আইওএম আরও জানায়, এখনো শহরের ভেতরে হাজারো মানুষ আটকা পড়ে আছে। হাসপাতাল, বাজার, পানির সরবরাহব্যবস্থা ধসে পড়ায় তারা দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতিতে পড়েছে।
জাতিসংঘের সুদানবিষয়ক স্বাধীন ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের সদস্য মোনা রিশমাওয়ি বিশেষ অধিবেশনে জানান, এখন আল ফাশেরের বেশির ভাগ জায়গা অপরাধস্থল। তিনি আরও জানান, তাঁরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এবং যে প্রমাণ পেয়েছেন, তা ভয়াবহ। সেখানে ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, ধর্ষণ, মুক্তিপণের জন্য অপহরণ, নির্বিচারে আটক ও গুমের মতো ঘটনা ঘটেছে।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এসএএফ এবং আরএসএফ উভয়ের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছে। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র সুদানের সেনাপ্রধান ও কার্যত দেশটির শাসক জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়। ওয়াশিংটন অভিযোগ তোলে, তিনি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছেন।