হোম > বিশ্ব > আফ্রিকা

এবার তেলের খনি নাইজেরিয়াতে নজর ট্রাম্পের, অজুহাত—খ্রিষ্টানরা ভালো নেই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

নাইজেরিয়াকে বিশেষ তালিকাভুক্ত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ছবি: সংগৃহীত

আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়াতে ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে বলে দেশটিতে বিশেষ নজর রাখার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নাইজেরিয়াকে ধর্মীয় স্বাধীনতা-সংক্রান্ত নজরদারির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানিয়েছেন তিনি।

ট্রাম্পের অভিযোগ, দেশটির মুসলিম জনগোষ্ঠীর হাতে খ্রিষ্টানরা ‘গণহত্যার’ শিকার হচ্ছেন। এই ধরনের গুরুতর এবং অস্পষ্ট দাবির ভিত্তিতেই আফ্রিকান এ দেশটিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ বা কান্ট্রিস অব পার্টিকুলার কনসার্নের (সিপিসি) তালিকায় যুক্ত করা হবে।

সমালোচকেরা বলছেন, এই তকমা নাইজেরিয়ার ওপর ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক বা অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা জারির পথ প্রশস্ত করতে পারে।

গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লেখেন, ‘নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টান ধর্ম এক অস্তিত্বের সংকটের মুখে। হাজার হাজার খ্রিষ্টানকে হত্যা করা হচ্ছে। কট্টর ইসলামপন্থীরা এই গণহত্যার জন্য দায়ী। আমি এই কারণে নাইজেরিয়াকে একটি “বিশেষ উদ্বেগের দেশ” ঘোষণা করছি।’

তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইন, ১৯৯৮-এর অধীনে এই সিপিসি ক্যাটাগরি তৈরি করা হয়েছিল ধর্মীয় নিপীড়ন পর্যবেক্ষণ এবং তা বন্ধ করার পক্ষে কথা বলার জন্য। সাধারণত কংগ্রেস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত দ্বিদলীয় গ্রুপ ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের বিশেষজ্ঞদের দীর্ঘ সুপারিশের ভিত্তিতেই এই তকমা দেওয়া হয়।

ট্রাম্প এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মতামত না নিয়েই দ্রুত তদন্তের জন্য হাউস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস কমিটি এবং দুই রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য—রিপ্রেজেনটেটিভ রাইলি মুর ও টম কোলকে নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্পের এই অভিযোগগুলো ডানপন্থী আইনপ্রণেতারা বহু দিন ধরে প্রচার করে আসছেন। তাঁদের ভাষ্য, যা নাইজেরিয়ার অভ্যন্তরীণ সংঘাতকে কেবল কট্টর ইসলামপন্থীদের দ্বারা খ্রিষ্টানদের ওপর আক্রমণ হিসেবে তুলে ধরে।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এই ধরনের সরল ব্যাখ্যাকে ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, নাইজেরিয়ার অভ্যন্তরীণ সংঘাতগুলো কেবল ধর্মীয় পার্থক্যের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করা যায় না।

নাইজেরিয়া মূলত দুটি অংশে বিভক্ত: সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর এবং প্রধানত খ্রিষ্টান অধ্যুষিত দক্ষিণ। এক দশকের বেশি সময় ধরে উগ্রবাদী গোষ্ঠী বোকো হারামের সহিংস আক্রমণের ফলে দেশটি চরম অস্থিরতা ও বাস্তুচ্যুতির সম্মুখীন হয়েছে। এর পাশাপাশি পানি ও চারণভূমির মতো সম্পদের সংকট নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছে। এর ফলে প্রধানত খ্রিষ্টান কৃষক এবং মুসলিম পশুপালকদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নাইজেরিয়া সরকার দাবি করে, এই সংঘর্ষগুলোতে প্রাথমিকভাবে ধর্মের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

তা সত্ত্বেও, রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ এবং প্রতিনিধি রাইলি মুর ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। মুর বলেন, নাইজেরিয়ার খ্রিষ্টানদের জন্য আন্তর্জাতিক মনোযোগ, চাপ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে তিনি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।

এদিকে নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের রক্ষার কথা বললেও ট্রাম্প প্রশাসনের শরণার্থী নীতি নতুন করে সমালোচনায় এসেছে। স্বদেশ থেকে নিপীড়ন বা সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা নাইজেরিয়ার মানুষের জন্য কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি।

গত বুধবার ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী গ্রহণের সংখ্যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে (মাত্র ৭৫০০ জন) সীমিত করা হবে। কোটা বেশির ভাগই ‘দক্ষিণ আফ্রিকার আফ্রিকানার এবং ‘অবৈধ বা অন্যায্য বৈষম্যের শিকার’ ব্যক্তিদের মধ্যে বরাদ্দ করা হবে।

সমালোচকেরা এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করে যুক্তি দিয়েছেন, শরণার্থী মর্যাদা দেওয়া হয় নিয়মতান্ত্রিক নিপীড়ন বিবেচনায়, কেবল বৈষম্যের ভিত্তিতে নয়। ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানাররা ‘গণহত্যা’র শিকার হচ্ছে বলে ভুল দাবি করে কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়ে চলেছেন। এ ধরনের প্রচারণা চরম ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোই করে থাকে।

উল্লেখ্য, নাইজেরিয়াকে ‘আফ্রিকার দৈত্য’ বলা হয়। এর কারণ শুধু এর বিপুল জনসংখ্যা নয়, বরং এর বিশাল অর্থনৈতিক আকার এবং বিশ্ববাজারে খনিজ তেলের (পেট্রোলিয়াম) ক্ষেত্রে দেশটির প্রধান ভূমিকা। নাইজেরিয়ার অর্থনীতির মূল ভিত্তি খনিজ তেল সম্পদ। দেশটির দক্ষিণ অংশে, বিশেষত নাইজার নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে, খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের সমৃদ্ধ মজুত রয়েছে, যা আগামী বহু দশক ধরে ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট। নাইজেরিয়া বর্তমানে আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম অর্থনীতি। তেল উৎপাদন এবং রপ্তানির ওপর ভিত্তি করেই দেশটি এই অবস্থান ধরে রেখেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে নাইজেরিয়ার তেল রপ্তানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সুদানে যোদ্ধা পাঠাচ্ছে আরব আমিরাতের ঠিকাদার, ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা দিলেন কলম্বিয়ানদের

সোনা খুঁজতে গিয়েছিল দুই কিশোর, খনি ধসে চাপা পড়ে হলো মৃত্যু

বেনিনে সামরিক অভ্যুত্থান ঠেকিয়ে দিল সরকার অনুগত সেনারা

দক্ষিণ আফ্রিকায় হোস্টেলে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি, নিহত অন্তত ১১

মুসলিম ব্রাদারহুড নিষিদ্ধের নির্দেশ ট্রাম্পের, নেপথ্যে সুদানকেন্দ্রিক আরব বিশ্বের নয়া ভূরাজনীতি

নামিবিয়ার নির্বাচনে আবারও জয়ী ‘অ্যাডলফ হিটলার’

রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে ১৭ যুবককে প্ররোচনার অভিযোগ—জ্যাকব জুমার মেয়ের পদত্যাগ

ভোটে পরাজয় টের পেয়ে গিনি বিসাউয়ের প্রেসিডেন্টই কি ঘটালেন সামরিক অভ্যুত্থান

গিনি বিসাউয়ে সামরিক অভ্যুত্থান, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল, প্রেসিডেন্ট বন্দী

এল-ফাশেরে ৩ দিনে ২৭ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে আরএসএফ: দারফুরের গভর্নর