ট্যারা চোখের সঙ্গে লক্ষ্মী-অলক্ষ্মীর কোনো সম্পর্ক নেই; বরং সময়মতো চিকিৎসা না নিলে বরণ করে নিতে হতে পারে অন্ধত্ব।
- ট্যারা চোখের মানুষের যে চোখটি বাঁকা থাকে, সেই চোখ তারা ব্যবহার করে না। মস্তিষ্ক ইমেজ ওভারল্যাপ বা কনফিউশন অথবা ডিপ্লোপিক ভিশনের জন্য সেই দৃষ্টিকে অগ্রাহ্য করে রাখে।
- ট্যারা চোখের মানুষেরা বাইনোকুলার ভিশন থেকে বঞ্চিত হয়। থ্রিডি ইমেজ তারা কখনোই খুব একটা বুঝতে পারে না।
- ট্যারা চোখের অধিকারীরা কোন জিনিস কতটুকু গভীর, তা ধারণা করতে পারে না। ফলে বাস্তব জীবনে বা কর্মক্ষেত্রের অনেক কাজে তারা আনফিট থাকে।
- ট্যারা চোখে অনেক ক্ষেত্রে সাপ্রেশনজনিত কারণে অলস চোখ বা এমব্লায়োপিয়া তৈরি হয়। এর ফলে বাঁকা চোখের দৃষ্টি আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়।
কেন হয়
বিভিন্ন কারণেই হতে পারে ট্যারা চোখ। অনেক সময় এর কারণ জানাও দুঃসাধ্য। জন্মগতভাবেও এ সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া আরও কিছু কারণ আছে ট্যারা চোখ হওয়ার ক্ষেত্রে।
- সময়ের অনেক আগে ও কম ওজনে শিশু জন্মালে।
- ছোটবেলায় বিশেষ কিছু ভাইরাসে সংক্রমণের শিকার হলে।
- শল্যচিকিৎসায় চোখের আঘাতজনিত কারণে।
- আনট্রিটেড মায়োপিয়া বা হাইপারোপিয়া থাকলে।
- ডাউন সিনড্রোমের মতো জেনেটিক্যাল সমস্যা থাকলে।
- মস্তিষ্কে পানি জমলে।
- পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে চোখের ক্যানসার থাকলে।
- চোখের মাংসপেশি নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ু দুর্বল হয়ে গেলে।
- চোখে রিফ্রাক্টিভ এরর, অর্থাৎ পাওয়ারজনিত দৃষ্টিস্বল্পতা থাকলে স্থায়ী কিংবা সাময়িক সময়ের জন্য চোখ বাঁকা হয়ে যেতে পারে।
চিকিৎসা
কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ট্যারা চোখের চিকিৎসা সহজেই করা সম্ভব। সঠিক পাওয়ারের একটি চশমাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সমস্যা সারিয়ে তুলতে পারে। তবে এই পাওয়ার দেওয়ার হিসাব সাধারণ চশমার চেয়ে আলাদা। এ ক্ষেত্রে ভুল পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করলে তা বিপদ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই সমস্যার সমাধানে পেডিয়াট্রিক আই স্পেশালিস্ট ও স্ট্র্যাবিসমাস (বাঁকা চোখ) বা সাব স্পেশালিটিতে (যেমন পেডিয়াট্রিক অপটোমেট্রিস্ট, অর্থপটিস্ট) যোগাযোগ করে পরামর্শ নিতে হবে।
মনে রাখবেন, আপনার শিশুর চোখের সামনে সঠিক সময়ে সামান্য দুটো কাচই বদলে দিতে পারে তার পৃথিবী।
লেখক: সাবেক ফ্যাকাল্টি ও প্রশিক্ষক, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র