হোম > স্বাস্থ্য > স্বাস্থ্য-গবেষণা

ঘুমের ঘোরে খাওয়া রহস্যময় ও জটিল এক স্বাস্থ্য সমস্যা

ফিচার ডেস্ক

ঘুমের ঘোরে হাঁটার কথা আমরা অনেকে শুনেছি। কিন্তু ঘুমের ঘোরে খাওয়ার কথা কি শুনেছেন? চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় স্লিপ-রিলেটেড ইটিং ডিসঅর্ডার। এই উড়িয়ে দেওয়ার মতো ছোট ঘটনা একটি জটিল স্বাস্থ্যগত সমস্যা। এটি আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার পরিবারের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

স্লিপ-রিলেটেড ইটিং ডিসঅর্ডার এমন এক সমস্যা, যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি ঘুমের মধ্যে অবচেতন অবস্থায় রান্নাঘরে চলে যায় এবং খাবার খেতে শুরু করে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, পরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর তার এই ঘটনা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র স্মৃতি থাকে না। সাধারণত এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায় প্রতি রাতেই এমনটা করে। এক রাতে একাধিকবারও ঘুমের ঘোরে খাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে।

খাদ্যাভ্যাসের বিচিত্র রূপ

এই অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তির খাওয়ার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণত ঘুমের ঘোরে খাওয়ার সময় তিন ধরনের ঘটনা ঘটে।

উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া: আক্রান্ত হওয়া মানুষ সাধারণত ক্যান্ডি, চিপস অথবা কেকের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবারের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ে।

অস্বাভাবিক সংমিশ্রণের খাবার খাওয়া: অনেক সময় তারা অত্যন্ত অদ্ভুত ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের সংমিশ্রণ তৈরি করে। যেমন সিগারেটে মাখন মাখিয়ে খাওয়া কিংবা অন্য কোনো অখাদ্য বস্তু খাওয়া।

দ্রুততম সময়ে খাবার খাওয়া: বিছানা থেকে রান্নাঘর হয়ে পুনরায় বিছানায় ফিরে আসার পুরো প্রক্রিয়াটি মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে শেষ হতে পারে। ফলে তারা খুব দ্রুত খাবার খেয়ে ফেলে।

ঝুঁকি ও স্বাস্থ্যগত প্রভাব

এসআরইডির প্রভাব কেবল ঘুমের ব্যাঘাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি দীর্ঘ মেয়াদে শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এসব প্রভাবের মধ্যে আছে—

  • অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার ফলে স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে।
  • না জেনে অ্যালার্জিযুক্ত খাবার খেয়ে ফেলায় মারাত্মক শারীরিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
  • অবচেতন অবস্থায় গরম খাবার নাড়াচাড়া করা বা ধারালো ছুরি ব্যবহারের সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
  • অন্ধকারে চলাফেরা করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • নিয়মিত এমন ঘটনায় ব্যক্তি লজ্জিত এবং বিষণ্ন বোধ করতে পারে।
  • শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ায় আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং দুশ্চিন্তা দেখা দিতে পারে।

কেন এমন হয়

এসআরইডির নির্দিষ্ট কোনো একক কারণ না থাকলেও বেশ কিছু বিষয় লক্ষণীয়। যেমন—

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: বিষণ্নতা বা ঘুমের সমস্যার জন্য ব্যবহৃত কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের প্রভাবে এটি হতে পারে।

অন্যান্য রোগ: রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম বা অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো সমস্যা এর পেছনে থাকতে পারে।

জীবনযাত্রা: অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অনিয়মিত ঘুম এবং অ্যালকোহল অথবা মাদক ত্যাগের পরবর্তী সময়ে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

প্রতিকার ও ব্যবস্থাপনা

এই রহস্যময় সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসা জরুরি। এর প্রতিকারে যা করা যেতে পারে—

  • যদি পরিবারে কেউ এই সমস্যায় আক্রান্ত থাকে, তবে রাতে রান্নাঘর তালাবদ্ধ রাখা, ধারালো সরঞ্জাম লুকিয়ে রাখা এবং বিপজ্জনক বস্তু সরিয়ে ফেলা জরুরি।
  • অন্তত দুই সপ্তাহ আক্রান্ত ব্যক্তির ঘুমের ধরন, মানসিক অবস্থা এবং পরবর্তী দিনের শক্তি বা ক্লান্তি নিয়ে একটি ডায়েরি লিখতে বলুন। এটি চিকিৎসকের রোগনির্ণয়ে সহায়তা করবে।
  • দিনের বেলা খাবার গ্রহণে অতিরিক্ত কড়াকড়ি বা ক্যালরি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেন না। কারণ, এটি মাঝরাতে খাবারের তীব্র আকাঙ্ক্ষা তৈরি করতে পারে।
  • পরিস্থিতি জটিল হলে চিকিৎসকের পরামর্শে পলিসমনোগ্রাফি বা স্লিপ স্টাডি করা যেতে পারে।

সূত্র: সিএনএন হেলথ, এএসএসএম

শীতে খিচুড়ি কেন খাবেন

এই শীতে কেন খাবেন তেজপাতা ও লবঙ্গ চা

যে ছয় কারণে দীর্ঘস্থায়ী শুকনো কাশি হয়

ঠান্ডার সময় ব্যায়াম শুরু করার আগে

ভারতে চিকিৎসকদের জন্য হাতে প্রেসক্রিপশন লেখার নতুন নিয়ম

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি: অর্থায়ন বন্ধে যক্ষ্মা বিস্তারের শঙ্কা

এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাসের হার ৬৬.৫৭ শতাংশ

শীতে যেসব খাবার মন শান্ত রাখবে

পুরুষ বন্ধ্যত্ব: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

শীতকালীন নানা রোগ থেকে মুক্ত থাকবেন যেভাবে