মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করেছে সরকার। গতকাল বুধবার এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
অধ্যাদেশে বলা হয়, মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন ও প্রতিস্থাপনের জন্য আগের আইনের বিধান অপ্রতুল। মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন ও প্রতিস্থাপন সহজীকরণ, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার রোধ ও অবৈধ পাচার রোধ করতে আগের আইন রহিত করে একটি যুগোপযোগী অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা সমীচীন। সে জন্য সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করলেন।
নতুন এই অধ্যাদেশের ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপন খুব সহজ হবে। আগে যেমন ছিল, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য নিকটাত্মীয়, যেমন—ভাইবোন, বাবা-মা থেকে (১৪ জন) নিতে পারতেন। এখন এটাকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। অঙ্গদানের ক্ষেত্রে বাড়ানো হয়েছে পরিধি। নতুন করে মামাতো, খালাতো, চাচাতো, ফুফাতো ভাইবোন, ভাতিজা, ভাগনে, সৎভাই ও বোন যুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ নিকটাত্মীয়ের পরিধি ৩০ জনে বৃদ্ধি পেয়েছে।
একই সঙ্গে নিঃস্বার্থবাদী দাতা যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নিঃস্বার্থ দাতা সেই ব্যক্তি, যিনি গ্রহীতার সঙ্গে আত্মীয়তা সম্পর্কিত হোক বা না হোক, দীর্ঘদিনের পরিচয়ের কারণে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে তাঁর কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গ্রহীতাকে দান করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তবে তাঁর বয়স হতে হবে ১৮ বছর। একইভাবে, মানসিকভাবে অসুস্থ বা অসম্মতিতে অঙ্গ নেওয়া যাবে না। কোনো আর্থিক লেনদেন থাকতে পারবে না। এই নিঃস্বার্থদাতা নির্ধারণ ও অনুমতি প্রদানের জন্য কমিটির সুপারিশ প্রাপ্ত হতে হবে।
এ ছাড়া এই অধ্যাদেশে মৃত ব্যক্তির অঙ্গ নেওয়ার প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে। বয়সসহ কিছু শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের অনেককেই এখন কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য আর বিদেশে যাওয়া লাগবে না। দেশের হাসপাতালগুলোও এই সেবা দিতে সক্ষম হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান আজ সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই আইনে মূলত নিকটাত্মীয়দের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। নতুন কিছু বিষয়ও যুক্ত করা হয়েছে। আমাদের দেশে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের বড় ঝুঁকি হলো অর্থের বিনিময়ে কিডনি বা অন্য কোনো অঙ্গ প্রতিস্থাপন। এ জন্য আমাদের সতর্ক হতে হয়েছে। এগুলো থামানোর জন্য শক্তিশালী কিছু কমিটি গঠন করা হয়েছে। সম্পূর্ণ নতুন দুটি বিষয় যুক্ত হয়েছে। প্রথমটি হলো “অসামঞ্জস্য জোড়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিনিময় বা প্রতিস্থাপন (সোয়াপ ট্রান্সপ্লান্টেশন)”, যেখানে নিকটাত্মীয় যে কিডনি বা অঙ্গ দিতে চেয়েছেন, কিন্তু গ্রহীতার সঙ্গে টিস্যু মিলছে না, তিনি অন্য দাতা-গ্রহীতার জুটির সঙ্গে বিনিময় করতে পারবেন। দ্বিতীয়টি হলো নিঃস্বার্থদাতার বিষয়। এখানে কেউ যদি কাউকে নিঃস্বার্থে কিডনি বা অঙ্গ দিতে চায়, তিনি তা দিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে কোনো অর্থের বিনিময় হয়নি তা প্রমাণ করতে হবে। এই বিষয়ে একটি উচ্চ কমিটির কথা আইনে বলা হয়েছে। ওই কমিটির সবার কাছে কেউ মিথ্যা বলতে পারবে না, ফলে সহজেই ধরা পড়বে। এ ছাড়া মৃত ব্যক্তির অঙ্গ নেওয়ার ক্ষেত্রেও আরও কিছু সহজতর বিধি যুক্ত করা হয়েছে। এই আইন একটি যুগান্তকারী আইন।’