হোম > ছাপা সংস্করণ

জাহিলি যুগের মানবাধিকার সনদ

আবদুল আযীয কাসেমি

মহানবী (সা.)-এর আবির্ভাবের আগ পর্যন্ত এবং এরপরও বেশ কয়েক বছর আরবে কোনো সুসংহত রাষ্ট্রব্যবস্থা ছিল না। বিচার-আচার ও সামাজিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো গোত্রীয় কিছু রীতিনীতির মাধ্যমে। গোত্রে গোত্রে হানাহানি ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলছিল আরব-সমাজ। মহানবী (সা.) যখন যৌবনে পা রাখলেন, তখন আরবের কিছু রুচিসম্পন্ন যুবক মিলে গড়ে তুললেন সামাজিক সংগঠন হিলফুল ফুজুল। ‘হিলফ’ শব্দের অর্থ চুক্তি। যেহেতু তাঁরা সমাজের অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন বলে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন, তাই তাঁরা এর নাম করেছিলেন ‘হিলফ’। আর ‘ফুজুল’ মানে হচ্ছে অনুগ্রহ ও দয়া। যেহেতু এটা একরকম স্বেচ্ছাশ্রমের ওপরই গঠিত হয়েছিল, তাই তাঁরা একে ‘ফজল’ বা অনুগ্রহ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। 

প্রেক্ষাপট
তখন জিলকদ মাস চলছিল। চার সম্মানিত মাসের একটি। ইয়েমেনের জাবিদ শহরের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আরবের এক নেতা আস ইবনে ওয়ায়েল আস-সাহমি কিছু পণ্য কেনেন এবং দাম দিতে অস্বীকৃতি জানান। অসহায় ব্যবসায়ী কুরাইশ নেতাদের কাছে বিচার দিয়েও কোনো সুরাহা করতে পারছিলেন না। কারণ আস ছিলেন খুবই প্রভাবশালী নেতা। তবে কয়েকজন সম্ভ্রান্ত কুরাইশ যুবকের কাছে ব্যাপারটি অবমাননাকর ঠেকে। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন, এই অন্যায়ের প্রতিবিধান করবেন। সমমনা কয়েকজন যুবক আল্লাহর নামে শপথ করে চুক্তিবদ্ধ হলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে নির্যাতিতের পক্ষে দাঁড়িয়ে জালিমের কাছ থেকে অধিকার আদায় করেই ছাড়বেন। তাঁরা সম্মিলিতভাবে আসের ঘরে গিয়ে ব্যবসায়ীর অধিকার আদায় করে তাঁকে ফিরিয়ে দেন। 

মহানবী (সা.)-এর অংশগ্রহণ
সেই মানবতাবাদী যুবকদের একজন ছিলেন মানবতার বন্ধু মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা যখন তাঁকে নবুওয়ত দিয়ে সম্মানিত করলেন, তখনো তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে হিলফুল ফুজুলের জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং এ-ও জানিয়েছেন, ইসলাম আসার পরও যদি এমন কাজে আমাকে ডাকা হতো, আমি অবশ্যই সাড়া দিতাম। তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে জুদআনের ঘরে আমি এমন এক চুক্তিতে অংশ নিয়েছিলাম, যদি এর পরিবর্তে আমাকে লাল উটও দেওয়া হতো, ভালো লাগত না।’ 

চুক্তির উল্লেখযোগ্য ধারা

  • নির্যাতিত ব্যক্তিকে সাহায্য করা এবং তার অধিকার উদ্ধার করে দেওয়া। 
  • প্রত্যেক হকদারের কাছে তার হক বুঝিয়ে দেওয়া। 
  • কাবাঘরের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। 
  • পারস্পরিক সহযোগিতায় ন্যায়, সংহতি ও সেবামূলক কাজে অংশ নেওয়া। 

হিলফুল ফুজুল যা শেখায়
জাহিলি যুগে মানুষের জীবন যদিও অন্যায়ে ভরা ছিল, তবুও অসাধারণ কিছু মানবিক গুণ তাদের মধ্যে দেখা যেত। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিলফুল ফুজুল। অধিকার আদায়, ন্যায় প্রতিষ্ঠা, নির্যাতিতের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া—এসব এমন উন্নত মূল্যবোধ, যেগুলোর প্রতি পরবর্তী সময়ে ইসলামও সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কোনো সম্প্রদায়ের বিদ্বেষ যেন তোমাদের অন্যায়ে উদ্বুদ্ধ না করে।’ (সুরা নিসা: ৫৭) 

লেখক: শিক্ষক ও হাদিস গবেষক

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ