স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও আজও অরক্ষিত মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার গণকবর। এর অধিকাংশ জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। বাকি জায়গায় কলাগাছ ও আগাছায় ঢেকে আছে। একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবছর ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বর এখানে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং নিহতদের রুহের উদ্দেশে দোয়া ও প্রার্থনা করেন। তবে এখনো কোনো স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করতে পারেনি প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখা যায়, গণকবরের পূর্ব পাশ আটকিয়ে বসতবাড়ি নির্মাণ করেছেন এক ব্যক্তি। আর গণকবরের পশ্চিম পাশে একটি এনজিও বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে। বাকি জায়গায় কলাগাছ ও আগাছায় ঢেকে আছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে গাছে যে সাইনবোর্ড টাঙানো ছিল, তা মাটিতে পড়ে আছে। তাতে লেখা সাটুরিয়া বধ্যভূমি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সাটুরিয়া মডেল হাই স্কুল বর্তমানে সাটুরিয়া সরকারি আদর্শ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে। তারা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় বিভিন্ন স্থান থেকে স্বাধীনতাকামী নিরীহ মানুষকে ধরে এনে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এরপর এই বধ্যভূমিতে মাটি চাপা দিয়ে রাখে।
এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই বধ্যভূমিতে নিহত ব্যক্তিরা হলেন সুধীর চন্দ্র রায়, কালী প্রসন্ন রায়, মৃণাল কান্তি রায়, ডা. বিজয় রত্ন রায়, ফজু পোদ্দার, গাজী সাধু, রবি পাল, অরুণা সাহা, পারুল সাহা, মিনহাজ উদ্দিন, ডা. পরেশ ঘোষ, আব্দুল হালিম, কালু শেখ, ওমান বয়াতি, নিয়ামত আলী, মুক্তার আলী, নিতাই চন্দ্র রায়, অতুল কৃষ্ণ সাহা, রাধাচরণ ঘোষ ও আওলাদ হোসেন।
সাটুরিয়া উপজেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে, ৭২ শতাংশ জমির ওপর সাটুরিয়ার গণকবর সংরক্ষণ করার জন্য দুবার বাজেট আসে। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে টাকাগুলো দুবারই ফেরত গেছে। সারা দেশে গণকবর ও বধ্যভূমি সংরক্ষণ করার নির্দেশ থাকলেও সাটুরিয়ার গণকবর চিহ্নিত করার পরও তা সুরক্ষিত করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আ. খ. ম নূরুল হক বলেন, ‘সাটুরিয়ার গণকবরটি উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসন বছরে দুইবার কবর জিয়ারত করেই দায় সারেন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, যাঁরা দেশের জন্য জীবন দিলেন তাঁদের স্মৃতিটুকু রক্ষা করতে পারলাম না। বিষয়টি অতি কষ্টের।’
নূরুল হক বলেন, ‘দখলকারীরা বহুতল ভবন বানিয়ে গণকবরের বেশির ভাগ জায়গা দখল করে ৫০ বছর ধরে ভোগ করে আসছেন। ওই জায়গা ফেরত আনা সময় সাপেক্ষ। গণকবরের যেটুকু জায়গা এখন আছে, সেখানেই একটি স্মৃতি স্তম্ভ করার আহ্বান জানাই।’
সাটুরিয়া ইউএনও শারমিন আরা বলেন, ‘এত দিন পরে হলেও ১৯ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। খুব শিগগিরই স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।’