দেখতে অনেকটা শিমের মতো। তবে এটি শিম নয়। এটি সিলেট অঞ্চলের জনপ্রিয় সবজি ফরাস বা ঝাড়শিম। স্বাদে অনন্য ফরাস মুখরোচক সবজি হিসেবে সিলেটের সর্বত্র সমাদৃত। অনন্য স্বাদের ফরাস মাছ ও মাংসের সঙ্গে রান্না করা হয়। প্রবাসী সিলেটিদের জন্য ফরাস রোদে শুকিয়ে প্যাকেট করে পাঠানো হয় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
জকিগঞ্জ উপজেলার মাঠে প্রতি বছর প্রচুর ফরাস চাষ করা হয়। ধানের মতোই মাঠের পর মাঠ ফরাস চাষ করা হয়। কাঁচা ফরাস সবজি হিসেবে খাওয়া গেলেও এর মূল আকর্ষণ বীজ।
জকিগঞ্জ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাসিত বলেন, মূলত ঝাড়শিমই সিলেটে ফরাস হিসেবে পরিচিত। এটি অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ডাল জাতীয় শীতকালীন ফসল। এতে প্রোটিনের পরিমাণ প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের আবহাওয়া শীতকালে শুষ্ক ও মাটিতে রস থাকায় ফরাস শিমের চাষ সিলেটেই সীমাবদ্ধ। প্রাচীনকাল থেকেই এখানে ফরাস আবাদ হলেও গত এক দশকে এর আবাদ বেড়েছে। সিলেটের গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বড়লেখা, জৈন্তা ও কানাইঘাট উপজেলায় মৌসুমে প্রচুর ফরাস উৎপাদন হয়। ভোজনবিলাসী সিলেটিদের কাছে এর চাহিদাও ব্যাপক। বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরাসের উৎপাদন ও বিস্তৃতি নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
শীতকালীন সবজি ফরাস। বেলে, দোআঁশ মাটিতে এর ফলন ভালো হয়। পুরো নভেম্বর মাস ফরাস চাষের উপযোগী। সঠিক পরিচর্যা ও মাটিতে রস থাকলে দেড় থেকে দুই মাসে ফরাস বীজ খাবার উপযোগী হয়। বিঘাপ্রতি ১৫০-২০০ কেজি ফরাস উৎপাদন হয়। জকিগঞ্জে এ বছর প্রায় ৮০০ বিঘা জমিতে ফরাস আবাদ করা হয়েছে। শিং, মাগুর, কই, বোয়াল, কানলা, আইর মাছ কিংবা মোরগের মাংসে ফরাসের স্বাদ একটু বেশিই।
সারা বছরই সিলেটে কমবেশি ফরাস পাওয়া যায়। মৌসুমে প্রতি কেজি ফরাসের দাম ৪০-৮০ টাকা।
ফরাস বিক্রেতা আইনুল হক বলেন-দাম বেশি হওয়ায় সাধারণত ধনীরাই ফরাস বেশি ক্রয় করে থাকেন।
কৃষি তথ্য সার্ভিস খামারবাড়ি ঢাকার পরিচালক রেজানুল ইসলাম মুকুল বলেন, পুষ্টিসমৃদ্ধ শীতকালীন এ সবজ সিলেট ছাড়াও চট্টগ্রাম ও কুমিল্লাতে কিছু কিছু জন্মে থাকে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও কম খরচে কম পরিশ্রমে উন্নত পুষ্টির ফরাসের আবাদ করা যায় সহজেই।