হোম > ছাপা সংস্করণ

বার্ধক্যের চ্যালেঞ্জ, সমাজকর্মীর ভূমিকা

হাসান আলী

বার্ধক্য হলো জীবনের শেষ ধাপ। চ্যালেঞ্জ হলো স্বস্তিদায়ক, শান্তিপূর্ণ বার্ধক্য যাপনের বাধাসমূহ। মোকাবিলা হলো বাধা অপসারণের কৌশল। সমাজকর্মী বলতে বোঝায় সমাজের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোর ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা পালনকারী। ভূমিকা মানে অবস্থান বা কাজ। 

পেশাগত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সমাজকর্মীরা যেসব কৌশল অবলম্বন করেন সেটাকে সমাজকর্ম পদ্ধতি বলে। সমাজকর্মীরা ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যার সমাধান, প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নে কাজ করেন। সমাজকর্মীর সেবাসংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। 

বার্ধক্যের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো শারীরিক সমস্যা। চোখ, দাঁত, কান, কিডনি, ফুসফুস, লিভার, হার্ট, ত্বক, দুর্বল হয়ে কার্যকারিতা কমতে থাকে। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল, অ্যালার্জি, ক্যানসার, জয়েন্টে ব্যথা, হাড়ক্ষয় রোগ, হরমোনের সমস্যা ইত্যাদির জন্য নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়। 
মানসিক সমস্যাগুলো হলো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, বিষণ্নতা, নিদ্রাহীনতা, সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি। 

স্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাজকর্মী সংশ্লিষ্ট রোগের চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নাম-ঠিকানা, হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ঠিকানা, চিকিৎসাব্যয়, গরিব রোগীর বিনা মূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ পাওয়ার সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবেন। রোগীকে হাসপাতাল, ক্লিনিকে ভর্তি করে জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করার মতো দক্ষতা থাকতে হবে। 

অসহায় দরিদ্র দুস্থ রোগীদের সমাজসেবা বিভাগ থেকে সরকারি অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং চিকিৎসাব্যয় মেটানোর জন্য তহবিল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ। 
চিকিৎসা শেষে স্বাভাবিক স্বাধীন জীবন যাপনে ফিরিয়ে আনতে কার্যকরী ভূমিকা পালন। ওষুধ, পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। 
থাকা-খাওয়া, সেবা-যত্ন পাওয়ার সুযোগ-সুবিধা সংকুচিত হওয়াও বার্ধক্যের এক বড় সমস্যা। সমাজকর্মী দুস্থ অসহায় প্রবীণদের পুনর্বাসনের জন্য নিঃখরচায় সরকারি-বেসরকারি প্রবীণ নিবাস এবং বৃদ্ধাশ্রমের খোঁজখবর সম্পর্কে হালনাগাদ অবগত থাকবেন। টাকার বিনিময়ে প্রবীণ নিবাসে থাকা-খাওয়া সেবা পাওয়ার সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা প্রবীণ নিবাসগুলোর সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। সমমনা প্রবীণেরা একসঙ্গে কিংবা মেস করে থাকতে চাইলে আন্তরিকভাবে সহায়তা করতে হবে। 

একজন প্রবীণ পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রে নানান রকমের নিপীড়ন, নির্যাতন এবং বৈষম্যের শিকার হন। মানসম্মানের কথা চিন্তা করে অধিকাংশ প্রবীণ নির্যাতন-নিপীড়নের কথা প্রকাশ করতে চান না। প্রবীণ বয়সে হত্যা এবং আত্মহত্যার ঝুঁকি থাকে। টাকাপয়সা, জমিজমা, ঘরবাড়ি, সহায়সম্পদ বেহাত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। স্বাধীনভাবে চলাফেরা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। সমাজকর্মীর দায়িত্ব হলো ব্যক্তির নিরাপত্তার ঝুঁকি পর্যালোচনা করে ব্যক্তির জান-মাল রক্ষায় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নানা ধরনের সামাজিক উদ্যোগ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির নিরাপত্তাবোধ বাড়ানো। 

প্রবীণের দীর্ঘমেয়াদি পরিচর্যা নিশ্চিত করা দরকার। বাংলাদেশে ষাটোর্ধ্ব প্রবীণের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে, একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি পরিচর্যার চাহিদাগুলো প্রবল হচ্ছে। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত প্রবীণের দৈনন্দিন কাজগুলো করতে সহায়তাকারীর প্রয়োজন হয়। অতি প্রবীণের জীবনকে স্বস্তিদায়ক ও শান্তিপূর্ণ করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিচর্যার দরকার হয়। 

প্রবীণের বিনোদন লাভের সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার। আমাদের অধিকাংশ মানুষের ধারণা, প্রবীণ মানুষ খাবেদাবে ঘুমাবে, ধর্মকর্ম করবে, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাবেন। বিনোদন যে একজন প্রবীণের মৌলিক চাহিদা এটা খুব কম মানুষই বিবেচনা করতে পারে। জীবন যাপন আর জীবন উপভোগ করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। প্রবীণকে জীবন উপভোগ করার সুযোগ করে দিতে হবে। জীবন উপভোগ করার মধ্য দিয়েই সার্থকতা তৈরি হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিনোদন অবস্তুগত সুখ যা ব্যক্তিকে তৃপ্ত এবং সন্তুষ্ট করে। বই পড়া, আড্ডা দেওয়া, গান শোনা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, দর্শনীয় স্থান দেখা, সমাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, গল্প-কবিতা লেখা, নাটক-সিনেমা দেখা, বাগান করা, সৃজনশীল কাজে মগ্ন হয়ে থাকা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা, পছন্দের লোকজনের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া এবং পছন্দের কাজে কার্যকর ভূমিকা পালন করা সমাজকর্মীর দায়িত্ব। 

সমাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রবীণদের অংশগ্রহণ অনেকটাই দুর্বল। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রবীণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সমাজকর্মী ভূমিকা পালন করতে পারেন। 
ধনী-দরিদ্র সব প্রবীণই কম-বেশি নিঃসঙ্গতায় ভোগেন। সঙ্গলাভ একজন মানুষের অধিকার হিসেবে বিবেচিত হওয়া দরকার। গ্রামের চেয়ে শহরের প্রবীণেরা নিঃসঙ্গতায় বেশি ভোগেন। নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্ত করতে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। সমাজকর্মী এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেন। 

মানুষ এখন বিশ্বাস করে তদবির ছাড়া কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো অনেক কঠিন কাজ। তাই প্রবীণ নীতিমালা বাস্তবায়নে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে প্রবীণদের সংগঠিত করে আওয়াজ তুলতে সমাজকর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে। শিল্প-কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বিমা, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, গণপরিবহন প্রবীণবান্ধব করে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। 

সমাজকর্মী তাঁর কাজের জন্য পারিশ্রমিক, সুযোগ-সুবিধা পাবেন এবং একই সঙ্গে সম্মান, মর্যাদার অধিকারী হবেন।

লেখক: হাসান আলী 

প্রবীণ বিষয়ে লেখক, গবেষক ও সংগঠক

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ