শচীন দেববর্মন তাঁর স্ত্রী মীরা দেববর্মনের ওপর খুব নির্ভরশীল ছিলেন। সংগীতজীবনে মীরা ছিলেন শচীনের প্রেরণা, উৎসাহ। শচীন দেববর্মনের কণ্ঠে জনপ্রিয় গানের অনেকগুলোই মীরার লেখা। কয়েকটি গানের প্রথম কলি উল্লেখ করলেই যে কেউ নিশ্চিত হবেন, শচীনের জন্য মীরার লেখা গানগুলোই এখনো আপনার কানে বাজে। ‘কে যাস রে, ভাটি গাঙ বাইয়া’, ‘আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই’, ‘না, আমারে শশী চেয়ো না’, ‘বর্ণে, গন্ধে, ছন্দে গীতিতে হৃদয়ে দিয়েছ দোলা’, ‘বিরহ বড় ভালো ভালো’, ‘শোনো গো দখিন হাওয়া’, ‘ও বাঁশি, ঘাটে লাগাইয়া ডিঙা পান খাইয়া যাও’, ‘নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক’।
আর কি উদাহরণের দরকার আছে?
একদিন সলিল ঘোষ প্রশ্ন করলেন শচীনকত্তাকে, ‘বৌদী গান করেন না?’
শচীনকত্তা হেসে বললেন, ‘মীরা সংগীতচর্চায় আর কোথায় সময় পায়, আমার ইনকাম ট্যাক্সের হিসাব রাখতেই ওর সময় চলে যায়।’
আসলে শচীন দেববর্মনের জীবনটা সুস্থ, চাপহীনভাবে বয়ে যেতে পেরেছে মীরা দেবী ছিলেন বলেই। দাম্পত্যজীবনে তাঁদের সমঝোতা, বোঝাপড়া ছিল ঈর্ষণীয়।
মুম্বাইয়ের একটি ঘটনা। শান্তিনিকেতনের কারুসঙ্ঘ মুম্বাইয়ের জাহাঙ্গীর আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাদের বাটিক শাড়ি, চাদর, কাঁথা। শচীন দেববর্মন গলায় দেওয়ার চাদর খুব পছন্দ করতেন। মীরা সে রকম কিছু চাদর কিনলেন। এদিকে শচীনকত্তার ইচ্ছে হলো স্ত্রীকে ‘সারপ্রাইজ’ দেবেন। তিনি সলিল ঘোষকে একটি শাড়ি দেখিয়ে আড়ালে ডেকে বললেন, ‘মীরাকে কিছু বলবে না। ওই শাড়িটা খুলে ওর অজান্তে আমাকে যাবার সময় দিয়ে দিয়ো। মীরার কাছে এখন দাম চেয়ো না। আমার পকেটে এখন টাকা নেই, আমি তোমাকে পরে দিয়ে দেব। বাড়িতে ফিরে মীরাকে সারপ্রাইজ দিতে চাই!’
কিন্তু সারপ্রাইজ দেওয়া হলো না। কারুসঙ্ঘের কর্মীরা মীরার সামনেই শাড়িটা প্যাক করছিলেন। মীরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘শাড়িটা কে নিল?’
শচীন বলতে বাধ্য হলেন, ‘ওটা আমি দিতে বলেছি। তুমি দামটা তাহলে দিয়ে দাও।’
সূত্র: সলিল ঘোষের ভূমিকা, সরগমের নিখাদ, পৃষ্ঠা ২৬-২৭