ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে সব মিলিয়ে ৫০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। এতে বেড়েছে জনদুর্ভোগ। উপজেলা সদরের সঙ্গে সরাইল হাওরাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। উপজেলার অনেক সড়কের কিছু কিছু অংশ এখনো পানির নিচে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অফিস বলছে, এই ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ১৮ কোটি টাকা। এসব সড়ক সংস্কারের জন্য ক্ষতির পরিমাণ জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত জুন মাসের শুরুতে প্রথমে সরাইলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এরপর দ্রুত বাড়তে থাকে পানি। এতে উপজেলার সরাইল-অরুয়াইল ও মলাইশ-শাহজাদাপুর সড়ক দুটি পানিতে তলিয়ে যায়। পানির প্রবল স্রোতে শুরু হয় সড়কের ভাঙন। এ ছাড়া সরাইল-তেরকান্দা, বড্ডাপাড়া-তেরকান্দা-কাটানিশার সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা সদর ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক পানিতে নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিছু কালভার্ট, নালা ও সেতুর অংশবিশেষ।
উপজেলা সদর থেকে অরুয়াইল বাজার সড়কের কালিশিমুল নামক স্থানে উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানির স্রোতের তোড়ে রাস্তা ভেঙে খালের সৃষ্টি হয়েছে। অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, রাস্তাটিকে বাঁচানোর জন্য নিজ অর্থায়নে নৌকা বোঝাই করে ইট দিয়ে রাস্তাটি মেরামত করেছেন।
এ ছাড়া অরুয়াইল-সরাইল সড়কটির ভুইশ্বর বাজার থেকে লোপাড়া বাজার পর্যন্ত বড় ধরনের ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।
উপজেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়ক ভাঙনের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন মানুষ। সড়কের এই দুরবস্থার কারণে যান চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। আরও বিপাকে পড়েছেন অসুস্থ রোগীর স্বজনেরা। যেকোনো জরুরি চিকিৎসার জন্য উপজেলা ও জেলা সদর হাসপাতালে আসতে হয়।
উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের বরইচারা গ্রামের লিয়াকত আলী বলেন, ‘আমার বয়স ৫৫ বছর। এই জীবনে বন্যার পানির এমন স্রোত দেখিনি। আর এই বন্যায় সড়কের যে ক্ষতি হয়েছে, এমন ক্ষতিও দেখিনি কখনো। উপজেলার অনেক সড়কের ওপর দিয়া সমুদ্রের মতো ঢেউ গেছে।’
ধামাউড়া গ্রামের সাহাজ উদ্দিন বলেন, ‘বন্যা রাস্তাঘাট ভাইঙ্গা একেবারে নাশ কইরা গেছে। এই রাস্তা যে কোন দিন ঠিক হইব, একমাত্র আল্লাহ জানেন।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৫০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ১৮ কোটি টাকা। এসব সড়ক সংস্কারের জন্য ক্ষতির পরিমাণের কথা জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠিয়েছি।’