করোনা মহামারিতে বাড়ে আনারসের চাহিদা। এতে চড়া দামও পান চাষিরা। ভালো দাম পাওয়ায় চলতি বছর কৃষকেরা আনারস চাষে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন।
ফলে চারার দাম বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। বর্তমানে প্রতি হাজার আনারসের চারা বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায়; যা গত বছরও ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
জানা গেছে, মধুপুরে আনারসের আবাদ শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনামলে। পাহাড়িয়া গড়াঞ্চলের ইদিলপুর গ্রামের বাসিন্দা মিজি দয়াময়ী সাংমা প্রথম আনারস চাষ শুরু করেন। স্বাধীনতার পর মিজি দয়াময়ী সাংমার বংশধর জন ভেরনা ও চিসিম এবং ইদিলপুর গ্রামের আব্দুল হালিম মাস্টার আনারস চাষে নতুন মাত্রা যোগ করেন।
সম্প্রতি করোনা মহামারির কারণে আনারসের চাহিদা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় দাম। এতে লাভবান হন কৃষক। গতবার লাভ হওয়ায় চলতি মৌসুমে আনারস চাষে ধুম পড়েছে মধুপুরের কৃষকদের মধ্যে। এতে চারার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। গত বছর ১ হাজার চারা ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। ছয় মাস আগে দাম বেড়ে হয় ১ হাজার টাকা। কিন্তু চাষের চাহিদা বাড়তে থাকায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চারার দাম। বর্তমানে এক হাজার আনারসের চারা বিক্রি হচ্ছে ৪-৫ হাজার টাকায়।
মধুপুরের লাউফুলা, চাপড়ি, দরিহাতিল, ইদিলপুর, বেরিবাইদ, নয়নপুর, কুড়াগাছা, পিরোজপুর, সাইনামারি, দোখলা, ভবানিটেকি, মমিনপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
লাউফুলা গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার আমি এক বিঘা জমিতে আনারস চাষ করেছি। কিন্তু এলাকার সবাই আনারস চাষে আগ্রহী হওয়ায় চারার সংকট দেখা দিয়েছে। ৩ হাজার চারা কিনতে আমাকে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়েছে। আর এই চারা কিনতে আমার ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার টাকা।’
নরকোনা গ্রামের রুবেল মিয়া বলেন, ‘৪ বিঘা জমিতে আনারসের চারা রোপণ করেছি। প্রতিটি আনারসের চারা সাড়ে চার টাকা করে কিনতে হয়েছে।’
আনারসের চারার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একশ্রেণির মানুষ ব্যবসা শুরু করেছেন। তাঁরা মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে কৃষকের কাছ থেকে চারা কিনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। আলোকদিয়ার মশিউর রহমান বলেন, ‘আমি প্রতিটি চারা সাড়ে তিন টাকা দরে কিনেছি। এক টাকা লাভে তা বিক্রি করব।’
দানকবান্দা গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আনারস আবাদে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ঝুঁকে পড়ায় জমির কদরও বেড়েছে। ৩০ শতাংশের এক বিঘা জমি ১৫ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য লিজ নিতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। আগে এই জমির লিজ ছিল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা।’
মধুপুর উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘গতবার উপজেলায় ৫ হাজার ৮ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে তা ৬ হাজর ৫০০ হেক্টর অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।’
মধুপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহরিয়ার আক্তার রিভা বলেন, ‘মধুপুরে আনারসের চাষ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের জন্য সুসংবাদ। কারণ মধুপুরে আনারসের সঙ্গে মাল্টা, পেঁপে, কমলাসহ বিভিন্ন রকমের সাথি ফসল করা হচ্ছে। এতে করে একই জমিতে বহুমাত্রিক ফলন হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হবেন। আর আনারসের প্রক্রিয়াজাতকরণের বিষয়টিও আমাদের ভাবনায় রয়েছে। যাতে কৃষক ক্ষতির মুখে না পড়ে, সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’