আজ ১ জুলাই বিশ্ব কৌতুক দিবস। এ রকম একটি দিনে ভারী ভারী কথা লেখার কোনো অর্থ হয় না। কৌতুক আর রসিকতার মাধ্যমে জীবনের নির্যাস যদি পাওয়া যায়, তাহলে অনর্থক বড় বড় কথা বলার কী দরকার? আমাদের চারদিকে যেসব ঘটনা ঘটে চলেছে, তারই প্রতিক্রিয়ায় তৈরি হয় কৌতুক। ফলে কৌতুকগুলোর সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক নেই—এ রকম ভাবা ঠিক নয়; বরং কৌতুকের মাধ্যমে এমন কিছু সত্য বের হয়ে আসে, যা সরাসরি বললে ‘খবর আছে’।
যা-ই হোক, আমরা এমন কিছু কথা বলি, যেগুলো শুনলে হাসিও পাবে, বাস্তবকেও ধরা যাবে। যেমন ধরুন, কোনো এক দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমেই তলানিতে ঠেকছে। এ রকম সময় দেশের প্রেসিডেন্ট ডাকলেন অর্থমন্ত্রীকে। কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে তিনি অর্থমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘জনাব অর্থমন্ত্রী, আমাকে বলুন তো, সত্যিই আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের কী অবস্থা?’
অর্থমন্ত্রী মাথা চুলকে বললেন, ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আমি পুরো বিষয়টির ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছি...’ তাঁকে থামিয়ে দিয়ে প্রেসিডেন্ট বললেন, ‘ব্যাখ্যা তো আমিও দিতে পারি। আমি শুনতে চাইছি, বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত অবস্থাটা কী?’
কোনো সন্দেহ নেই, এটা বিদেশি কৌতুক। সরকারিভাবে নানা ঘটনার নানা ব্যাখ্যা দেওয়া হতে থাকে, যার অনেক কিছুই প্রকৃত অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। সাধারণ জনগণের কাছে মিথ্যা ব্যাখ্যা দিতে দিতে একসময় মন্ত্রী তাঁর প্রেসিডেন্টকেও একটা রহস্যের মধ্যে রাখতে চান। কারণ, মিথ্যে ছাড়াও যে বাস্তব ঘটনার বর্ণনা হতে পারে, সেটাই একসময় ভুলে গেছেন অর্থমন্ত্রী।
২. বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোকে নিয়ে কৌতুকের শেষ নেই। সেই যে ১৯৯৪ সালে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, এখন পর্যন্ত দেশটি তিনিই চালাচ্ছেন। এ সময় পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘকাল ধরে প্রেসিডেন্ট পদটি রয়েছে তাঁরই দখলে।
একবার ঈশ্বর যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া আর বেলারুশের প্রেসিডেন্টদের ডেকে পাঠালেন। এরপর তিনি ভয়াবহ একটি তথ্য দিলেন তাঁদের। বললেন, ‘তিন দেশের প্রেসিডেন্টদের বলছি, দুই সপ্তাহের মধ্যেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। তোমরা তোমাদের দেশের জনগণের কাছে সে তথ্যটি পৌঁছে দাও।’
দেশে ফিরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর টেলিভিশন ভাষণে বললেন, ‘প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আপনাদের জন্য আমার দুটো সংবাদ আছে। একটি ভালো, একটি মন্দ। ভালো খবরটি হলো, সত্যিই ঈশ্বর আছেন, খারাপ খবরটি হলো, দুই সপ্তাহের মধ্যেই এই দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে বললেন, ‘প্রিয় ভদ্রমহিলা ও মহোদয়গণ। আপনাদের জন্য দুটো দুঃসংবাদ আছে। প্রথমটি হলো, বিশ্বাস করি আর না-ই করি, আসলেই ঈশ্বর আছেন। দ্বিতীয় দুঃসংবাদটি হলো, দুই সপ্তাহ পরেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।’
বেলারুশের জাতীয় টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে উঠলেন লুকাশেঙ্কো। বললেন, ‘স্বাধীন বেলারুশের জনগণ, আপনাদের জন্য আমি দুটো সুসংবাদ নিয়ে এসেছি। প্রথমটি হলো, স্বয়ং ঈশ্বর আমাকে আপনাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং দ্বিতীয়টি হলো, তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগপর্যন্ত আমি যেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনাদের সেবা করি।’
৩. রাশিয়া আর জার্মানির মধ্যে ফুটবল ম্যাচ হচ্ছে। জার্মানি এগিয়ে আছে ৩-০ গোলে। এ সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এক রুশ বৃদ্ধ চিৎকার করে বলছেন, ‘তোরা তো নিজেদের নাম ডোবাবি! কী খেলছিস! আমরা তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানদের তাড়া করে একেবারে রাইখস্টাগে পৌঁছে গিয়েছিলাম। আর তোরা! খেলতেই পারিস না! কে তোদের খেলা শেখাল?’
স্টেডিয়ামেই খেলা দেখছিল এক জর্জিয়ান। সবাই জানে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা ছিলেন জর্জিয়ান বংশোদ্ভূত স্তালিন। সেই জর্জিয়ান লোকটি বৃদ্ধ রুশ ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আরে দাদু, রাগ করেন কেন? সে সময় দলের কোচ আর এখনকার দলের কোচ তো এক নয়!’
নাহ! এবার সরাসরি ব্যাংকে ঢুকি কিছুক্ষণের জন্য। আমাদের দেশেও ব্যাংক নিয়ে কত কিছুই না হচ্ছে! দুই ব্যাংকারের দেখা হয়েছে রাস্তায়। তাঁদের একজন কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন কোনো এক দুর্বৃত্তকে। এরপর তাঁর ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। দেখা হওয়ার পর অন্য ব্যাংকার তাঁকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘কেমন আছেন?’
‘আর বলবেন না, খুব খারাপ। ঋণ দিয়ে আমি দেউলিয়া হয়ে গেছি। ব্যাংকের লেনদেনে নিঃস্ব হয়ে এখন জীবনের লেনদেন সাঙ্গ করতে চাইছি। কিন্তু পিস্তলটা মাথায় ধরলেই কেমন ভয় লাগছে। ভয়ে আত্মহত্যা করতে পারছি না!’
অন্য ব্যাংকার বললেন, ‘আরে! এটা কোনো সমস্যা হলো? আপনি একজন কিলারকে দায়িত্ব দিচ্ছেন না কেন?’
‘আরে ভাই! আমি কী করে একজন কিলারকে হায়ার করব? সেই টাকাটাও তো আমার নেই!’
অন্য ব্যাংকার অবলীলায় বললেন, ‘এ রকম একটি মহৎ কাজের জন্য আমি টাকা ধার দিতে পারি! তবে কে হবে গ্যারান্টার, সেটা লিখে দিয়ে যেতে হবে।’
৪. ব্যাংক লুটে টাকা-পয়সা নিয়ে যে লোকটি পগারপার হয়েছে, সে গেছে সুইস ব্যাংকে টাকা রাখতে। ব্যাংকে ঢুকে ব্যাংকারের সামনের চেয়ারে বসে সে ফিসফিস করে বলছে, ‘আমি আপনার ব্যাংকে দুই হাজার কোটি টাকা রাখতে চাই!’
ব্যাংকার দিলখোলা হাসি দিয়ে বলছে, ‘আরে, জোরে জোরে বলুন। কত টাকা এনেছেন, সেটা কোনো প্রশ্ন নয়। আমরা ছোট-বড় সব চোরকেই সম্মানের চোখে দেখি!’
এ তো গেল ব্যাংক ডাকাতের কথা। কিন্তু চতুর ব্যাংকাররাও তো রয়েছেন আমাদের আশপাশে। তাঁরা সরল ব্যাংক ডাকাতদের সঙ্গেও তামাশা করেন।
যেমন ধরুন, একজন ব্যাংক ডাকাত এক ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে অন্য ব্যাংকে এসেছেন সেই টাকা রাখতে। ব্যাংকের ম্যানেজারকে তিনি বলছেন, ‘আচ্ছা, আপনার ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুললে কি আমি লাখপতি হতে পারব?’
ম্যানেজার একগাল হেসে বললেন, ‘অবশ্যই পারবেন। আপনি যদি আমার ব্যাংকে কোটি টাকা রাখেন, তাহলে পরবর্তী ব্যাংক ডাকাত এসে সেই টাকা লুটেপুটে খেলেই আপনি একবারে কোটিপতি থেকে লাখপতি বনে যাবেন।’
ব্যাংক নিয়ে আরেকটা কৌতুক বলি। ব্যাংকার যদি মাস্তান হন এবং তিনি যদি ব্যাংক ডাকাতদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে পারেন, তাহলে কী হতে পারে, তা দেখা যাক। একজন এসেছেন ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে। বলছেন, ‘ঋণের আবেদন করলেই কি আমাকে ঋণ দেবেন?’
‘কেন দেব না?’ বললেন ব্যাংক ম্যানেজার।
‘আর আমি যদি সে টাকা ফেরত না দিই?’
‘সে ক্ষেত্রে পরপারে যাওয়ার পর স্বয়ং ঈশ্বরের সামনে আপনাকে দাঁড়াতে হবে।’
‘সেটা আবার কবে দাঁড়াতে হবে?’
‘খুব সহজ হিসাব। যদি ১০ তারিখের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকে, আর আপনি তা না দেন, তাহলে ১১ তারিখেই আপনি ঈশ্বরের দেখা পাবেন!’
৫. পৃথিবীর নানা দেশে যে মজার মজার নির্বাচন হয়, তা নিয়েও তো কৌতুকের শেষ নেই। এসব কৌতুকের ক্ষেত্রে নিরাপদ জায়গা হলো রাশিয়া। সেখানে এ ধরনের অজস্র কৌতুকের জন্ম হয়।
এক কোটিপতি প্রার্থী বলছেন, ‘পাঁচ হাজার রুবল পেলে কি পেনশনাররা আমাকে ভোট দিতে আসবে?’
‘না। মাত্র পাঁচ হাজার রুবলে পেনশনার আপনাকে ভোট দেবে না।’
‘আর যদি আমি তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার রুবল করে দিই?’
‘হ্যাঁ, তাহলে তারা বুথে আসতে পারে। তবে জনপ্রতি আরও ১৫ হাজার রুবল আপনাকে খরচ করতে হবে।’
‘সেটা আবার কার জন্য?’
‘সেটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য, যারা নজর রাখবে, পেনশনাররা ভোট দিতে এল কি না।’
অনেকেই মনে করেন, নির্বাচনে এখন যাঁরা দাঁড়ান, তাঁদের অধিকাংশের সঙ্গে স্থানীয় জনগণের কোনো যোগাযোগ নেই। টাকাই তাঁদের মূল চালিকাশক্তি। ত্যাগী রাজনীতিবিদদের দেখতে হলে এখন যেতে হবে জাদুঘরে। বাস্তবে তাঁদের দেখা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
এক ভোটার দারুণ ভাবনায় পড়েছেন। তাঁর এলাকায় যাঁরা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের সবাই কোটিপতি। কিন্তু তাঁরা কারা? একজন ছাড়া কাউকেই তো তিনি চেনেন না। তাই তিনি ভাবছেন, ‘কাকে যে ভোট দেব নির্বাচনে, সেটা জানি না। আর যাঁকে জানি, তাঁকে ভোট দিতে চাই না।’
এ রকম ঘটনা কি আমাদের দেশেও ঘটে? পাঠকেরা কী বলবেন এই প্রশ্নের জবাবে?
নির্বাচন নিয়ে আজকের মতো শেষ কৌতুক:
কাকে ভোট দেওয়া সংগত? গরিব নাকি কোটিপতি প্রার্থীকে?
গরিবদের ভোট না দেওয়াই ভালো। কারণ তাঁদের তো কিছুই নেই। তাই সবকিছুই তাঁর প্রয়োজন। সেই প্রয়োজন মেটাতে তিনি সংসদ সদস্য হয়েই চুরি করতে শুরু করবেন।
তাহলে কি কোটিপতিকে ভোট দেব?
বেশির ভাগ পুঁজিপতিই চুরি-ডাকাতি করে পুঁজি বানিয়েছেন। তারা চুরি করতেই ভালোবাসেন। সংসদ সদস্য হয়েও তাঁরা চুরি করবেন।
ব্যাস! এবার বেছে নিন। তাঁদের মধ্যে কাকে ভোট দেবেন, সেটাই শুধু আপনার ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা! এরপর গরিব বা বড়লোক যিনিই নির্বাচিত হোন না কেন, তাঁকে প্রশ্ন করুন, ‘আপনি কি সরকারি টাকা চুরি করবেন?’
তাঁর উত্তর হবে, ‘করব। তাতে সমস্যা কোথায়?’
‘যদি জনগণ তা জেনে যায়?’
উত্তরে তিনি হয়তো বলবেন, ‘এই তো আপনি জানলেন! তাতে কি আমার কোনো সমস্যা হলো?’
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা