বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের অন্যতম মুসলমান বাঙালি চিন্তাবিদ ও সাহিত্যিক মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ। ১৮৯৮ সালের ২ মার্চ তৎকালীন পাবনা জেলা ও শাহজাদপুরের ঘোড়াশালে তাঁর জন্ম। তিনি শাহজাদপুর হাইস্কুল ও রাজশাহী কলেজে অধ্যয়ন করেন।
পরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এমএ (দর্শন) ও আইন বিভাগ থেকে পাস করেন। পরে বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি চাকরিজীবনে প্রবেশ করে একে একে আয়কর অফিসার, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, ম্যাজিস্ট্রেট, সাব-ডিভিশনাল অফিসার ও কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ে সহকারী সেক্রেটারি পদে কাজ করেন।
সিভিল সাপ্লাই বিভাগেও তিনি কিছুদিন চাকরি করেন। দেশভাগের পর তিনি ফরিদপুর, কুষ্টিয়া ও ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক এবং পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ডেপুটি সেক্রেটারি (১৯৫১-৫৫) ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর ১৯৫৫-৫৭ পর্যন্ত বাংলা একাডেমিতে তিনি বিশেষ কর্মকর্তা হিসেবে প্রথম পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলা ভাষায় দার্শনিক ও চিন্তামূলক প্রবন্ধ রচনায় তিনি সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এগিয়ে থাকা মানুষ। তিনি সরকারের উচ্চপদে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ, সমাজ এবং দেশের কল্যাণ করার দায়বোধ থেকে সাহিত্য সাধনা করেছেন। সাহিত্য সাধনায় তিনি কতটা নাড়ির টান অনুভব করতেন, তা উপলব্ধি করা যায় তাঁর রচনাশৈলী, বিষয় নির্বাচন এবং ভাষা প্রয়োগের সুদক্ষ কৌশল দেখে, যা তাঁর সমসাময়িক লেখকদের থেকে তাঁকে স্বাতন্ত্র্য মর্যাদায় আসীন করেছিল।
তাঁর গ্রন্থসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: পারস্য প্রতিভা, মানুষের ধর্ম্ম, কারবালা ও ইমামবংশের ইতিবৃত্ত, নয়া জাতির স্রষ্টা হযরত মুহম্মদ, বাংলা সাহিত্যে মুসলিম ধারা ইত্যাদি। দর্শনের বিভিন্ন দুরূহ বিষয় সাবলীল বাংলা গদ্যে প্রকাশ করে তিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।
তিনি প্রবন্ধ সাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, দাউদ পুরস্কার লাভ করেন এবং পাকিস্তান সরকার কর্তৃক সিতারা-ই-ইমতিয়াজ পদক এবং প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড অব পারফরম্যান্স সম্মানে ভূষিত হন।