ঢাকা থেকে বরিশালগামী কুয়াকাটা-২ নামক যাত্রীবাহী লঞ্চের কর্মচারী কেবিনে নিহত শারমিন আক্তারকে (৩০) হত্যা করেছেন স্বামী মাসুদ হাওলাদার, দাবি পুলিশের।
সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে স্বামীর সঙ্গে লঞ্চে ওঠেন শারমিন। পরে শুক্রবার ভোরে বরিশালে পৌঁছার পর মাসুদ হাওলাদার একা লঞ্চ থেকে নেমে যান। শারমিনের বাবা এনায়েত হোসেন শুক্রবার রাতে বরিশাল এসে লঞ্চের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শারমিনের স্বামী মাসুদ হাওলাদারকে চিহ্নিত এবং মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন। মাসুদকে একমাত্র আসামি করে শুক্রবার রাতে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেছেন এনায়েত হোসেন। এদিকে কেবিনে নারী খুনের ঘটনায় লঞ্চের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করীম বলেন, ‘মাসুদ হাওলাদারকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তিনি ঝালকাঠীর পশ্চিম গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা জলিল হাওলাদারের ছেলে।’
শারমিনের বাবা এনায়েত হোসেন জানান, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করার অভিযোগে মাসুদ হাওলাদারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল তাঁর মেয়ে শারমিন। পরে আদালতের সাজা থেকে রেহাই পেতে ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর শারমিনকে বিয়ে করে মাসুদ। তবে বিয়ের পর তাঁদের পারিবারিক অশান্তি ছিল। শারমিন বাবার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না। তিনি ঢাকার তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়ায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। তাঁদের ঢাকা থেকে বরিশালে আসার বিষয়টিও জানতেন না শারমিনের বাবা এনায়েত হোসেন।
শারমিনের চাচাতো ভাই আরিফুর রহমান জানান, শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বরিশালের লঞ্চে এক নারী যাত্রীর লাশ উদ্ধারের খবর পান। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন লাশটি তাঁর বোন শারমিনের। শুক্রবার বরিশালে পৌঁছে লাশ শনাক্ত ও লঞ্চের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হন শারমিনের সহযাত্রী ছিলেন তাঁর স্বামী মাসুদ হাওলাদার।
বরিশাল নৌপুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জানান, কুয়াকাটা-২ লঞ্চে নিহত তরুণীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মৃতদেহের ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অভ্যন্তরীণ লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি সাঈদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘লঞ্চের কর্মচারীরা অবৈধভাবে স্টাফ কেবিন ভাড়ায় দেয়। কুয়াকাটা-২ এর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনা কেবল লঞ্চে ঘটে না। বছরে যে পরিমাণ দুর্ঘটনা লঞ্চে ঘটছে তা অন্য সব যানবাহনের তুলনায় কম।’
তবে বরিশাল নৌবন্দরের কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘লঞ্চে খুনখারাবির বিষয় মালিক পক্ষ দেখবে। তাঁরা বেতন দিতে হবে এ জন্য আনসার সদস্য রাখা বন্ধ করেছেন। মালিকেরা লঞ্চে যে সিকিউরিটি ব্যবস্থা রাখছেন তা পর্যাপ্ত না।’
প্রসঙ্গত, কুয়াকাটা–২ নামক যাত্রীবাহী লঞ্চটি শুক্রবার ভোরে ঢাকা থেকে বরিশালে পৌঁছার পর কর্মচারীরা কেবিন থেকে শারমিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার আগেই তাঁর স্বামী মাসুদ হাওলাদার কেবিন বাহির থেকে তালা মেরে পালিয়ে যান বলে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জানা যায়।