সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুলের ক্লাস নাইনে ভর্তি হয়েছিলেন আনোয়ারা বাহার চৌধুরী। সেটা ১৯৩২ সাল। জুলাই মাসে তিনি যখন ভর্তি হলেন, তখন বেগম রোকেয়া বেঁচে ছিলেন। সে বছরের ডিসেম্বর মাসেই তাঁর মৃত্যু হয়।
প্রতিদিন ঘণ্টা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েরা হলঘরে সমবেত হতো। শিক্ষকেরা একপাশে দাঁড়াতেন। সবশেষে বেগম রোকেয়া এসে দাঁড়াতেন শিক্ষকদের সামনে।
মূলত দেশি খ্রিষ্টান, অ্যাংগলো ইন্ডিয়ান, হিন্দু ও অবাঙালি মুসলিম নারীরা ছিলেন শিক্ষক। বাঙালি শিক্ষক ছিলেন আনোয়ারা বাহার চৌধুরীর খালাম্মা ফাতেমা খানম।
ছাত্রীরা বেগম রোকেয়াকে ডাকত ‘বড়ি ওস্তাদনিবি’ নামে। যার অর্থ ‘সবচেয়ে বড় ওস্তাদ’।
আনোয়ারা যখন এই স্কুলে ভর্তি হলেন, তখন অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো বাঙালি শিক্ষার্থী ছিল না। আনোয়ারার পড়াশোনার একটা বিষয় ‘স্পেশাল বাংলা’। অধিকাংশ ছাত্রীই তখন ছিল উর্দুভাষী। তাই মাঝে মাঝেই আনোয়ারাকে ডেকে তিনি জিজ্ঞেস করতেন, ‘কী, তোমার বাংলা পড়া কেমন চলছে?’
একদিন আনোয়ারার ইংরেজি ক্লাস চলছে। বেগম রোকেয়া এসে ঢুকলেন ক্লাসে। আনোয়ারাকে বললেন, ‘আমার সঙ্গে এসো তো!’ আনোয়ারার বুক ঢিপ ঢিপ। তাঁর সঙ্গে নিচে নেমে এলেন। এক ভদ্রমহিলা বসে আছেন। বেগম রোকেয়া আনোয়ারার পিঠে হাত রেখে বললেন, ‘মেরী, এই মেয়েটি ক্লাস নাইনে পড়ছে স্পেশাল বাংলা নিয়ে। ওর জন্য আমাকে, বিশেষ করে বাংলা সাহিত্যের শিক্ষার্থী রাখতে হয়েছে। তবে তুমি কেন তোমার মেয়েদের ভর্তি করতে দ্বিধা করছ?’
ভদ্রমহিলা আনোয়ারাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার অসুবিধা হচ্ছে না তো?’
আনোয়ারা বললেন, ‘না।’ বেগম রোকেয়া বললেন, ‘তোমাকে এ জন্যই এখানে নিয়ে এলাম। অনেকেই ভাবে আমার স্কুলে বুঝি বাংলা পড়ানোর কোনো ব্যবস্থাই নেই!’
ভদ্রমহিলা ছিলেন বেগম রোকেয়ার চাচাতো বোন মরিয়ম রশিদ। তিনি তাঁর দুই মেয়ে জাহানারা ও রওশন আরাকে ভর্তি করিয়েছিলেন এই স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে।
সূত্র: আনোয়ারা বাহার চৌধুরী, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন স্মারকগ্রন্থ, পৃষ্ঠা ৪২-৪৪